পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত

Google Alert – সেনাবাহিনী

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কারখানা বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের জেরে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত এবং আটজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালের সংঘর্ষে নিহত হাবিব ইসলাম (২০) নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাজীরহাটের দুলাল হোসেনের ছেলে ও ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি নিটিং কারখানায় কর্মরত ছিলেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) এভারগ্রিন প্রডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেড থেকে সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে সোমবার রাতে কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। ইপিজেডের প্রধান ফটকে সেই নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশে জানিয়েছে, টানা আন্দোলনে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় চালুর কথা জানানো হবে।

কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে ওই নোটিশ দেখতে পান। তারা কারখানার ভেতরে ঢুকতে না পেরে ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন উত্তেজিত শ্রমিকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং আশপাশের সাধারণ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সংঘর্ষে হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন আরও ৮ জন। পরে হতাহত শ্রমিকদের নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফারহান তানভিরুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে আটটার দিকে হাবিবুর রহমানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত ছয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার বিষয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।

শ্রমিকরা পরে নিহত শ্রমিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং সড়ক অবরোধ করেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেন। এরপর নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে বন্ধ থাকা যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা ২০ দফা দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র সমস্যাকে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত না করা।

শ্রমিক সোহাগ হোসেন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি তুলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা করেনি। উলটো কারখানা বন্ধ করে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।

এ ব্যাপারে নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাইদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You missed