পূজায় হামলার বিচার হচ্ছে কিনা, সেটাই বিবেচ্য: উদযাপন পরিষদ : সংবাদ অনলাইন

Google Alert – সেনাবাহিনী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ‘নির্বিঘ্ন’ করতে প্রশাসনের নানা পদক্ষেপে ‘আশ্বস্ত’ হওয়ার কথা জানিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে, তাদের ‘সে অর্থে উৎকণ্ঠা’ নেই।

এ উৎসব শুরুর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে সংগঠনটির নেতাদের ভাষ্য- দুর্বৃত্তরা হামলা ‘করতেই পারে’। ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা ধড়া পড়ছে কিনা, বিচার হচ্ছে কিনা, সেটিই তাদের ‘বিবেচ্য বিষয়’।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’ ও ‘মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি’ আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়। এ সময় নেতারা দুর্গাপূজা ‘নির্বিঘ্নে’ উদযাপিত হওয়ার আশা প্রকাশ করে পূজার দিনগুলোতে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং ঢাকায় অন্তত রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু রাখার দাবি জানান।

দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন জেলার সাত শতাধিক মণ্ডপকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট।

অন্যদিকে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশের ২৯ জেলাকে ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নাগরিক সমাজের নবগঠিত প্লাটফর্ম ‘সম্প্রীতি যাত্রা’। গতকালের সংবাদ সম্মেলনেও পূজা শুরুর আগেই ১৩টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার তথ্য দেয়া হয়েছে।

জেলাগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নেত্রকোণা, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, নাটোর, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রতিমা প্রস্তুত করার সময় মন্দিরে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গুজব’ ছড়িয়ে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা দেড় দশক ধরে চলছে বলে জানান বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর।

সর্বশেষ গঙ্গাচড়ার ঘটনাসহ এমন ঘটনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ‘উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে’ তুলে ধরার কথা জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে- কঠোর অবস্থানে থাকবে, আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় প্রতিমা এবং মন্দিরে হামলার ঘটনার পর অনেক দুর্বৃত্ত ধরা পড়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাচ্ছে, প্রশাসনের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব বিষয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও ধর্ম উপদেষ্টা, আইজিপি, মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান বাসুদেব ধর। গত এক বছর ধরে ঢালাও মামলার মাধ্যমে সংখ্যালঘু নেতাদের অনেককে ‘হয়রানি করা হচ্ছে’ দাবি করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব বলেন, ‘এটা আমরা সরকারকে জানিয়েছি এবং সেনাবাহিনীকেও আমরা জানিয়েছি। বিভিন্ন জেলায় কিছু কিছু ঘটনা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নিরসন হয়েছে। আমরা চাই, যেগুলো হয়নি সেগুলো সরকার এবং প্রশাসনের যেই অংশটি এটা দেখে তারা যেন পুজোর আগে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করেন।’

তাদের নেতারা এবং পূজাসংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর কমিটি ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই এই মামলার ‘শিকার হয়েছেন’। তারা যেন ‘নিশ্চিন্তে’ এই দুর্গাপূজায় অংশ নিতে পারেন, সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী’ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আবার ‘অতিরিক্ত কিছু’ করে না ফেলেন।

‘তারা অবশ্যই আমাদের দেখভাল করবেন, কিন্তু অতিরিক্ত কিছু করতে গিয়ে আবার সাধারণ জনগণের মধ্যে, যারা বিভিন্ন মণ্ডপে যাতায়াত করেন পরিবার নিয়ে, তাদের মধ্যে যেন একটা ভয়ভীতির সৃষ্টি না হয়। সেই ব্যাপারে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে।’

সুব্রতর প্রত্যাশা, ‘এবার পূজাতে সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষসহ ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এই আনন্দের সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করবো।’

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এটার পরিবর্তে ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ শীর্ষক ‘অমোঘ বাণী’ চালু করার কথা জানান তিনি, যার মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন সুব্রত চৌধুরী।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব আজ বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু এবং আগামী বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী ও শোভাযাত্রা পালনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষের কথা জানান।

এবার ঢাকায় গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর সারাদেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় প্রায় হাজারখানেক বেশি।

আগামীকাল মহালয়ার মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার মহালয়ার সপ্তম দিন অর্থাৎ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, অক্টোবরের ১ তারিখ নবমী এবং ২ অক্টোবর দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে। এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়। দশমীতে দেবীর মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলায় চড়ে। আর দোলায় দেবীর গমনকে মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত ধরা হয়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *