CHT NEWS
রাঙামাটি প্রতিনিধি,
সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২৫
“জুলাই অভ্যুত্থানের
ফসল আত্মসাৎ, বিষাক্ত ফণা তুলেছে ইউনুসের নব্য ফ্যাসিবাদ; পাহাড় সমতলে গণতান্ত্রিক
শক্তি এক হও” শ্লোগানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছরপূর্তি উপলক্ষে ‘অবিলম্বে
পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের
দাবিতে’ রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফভুক্ত তিন গণসংগঠন।
আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট
২০২৫) দুপুর ১:৩০ টার সময় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি),
হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর রাঙামাটি জেলা শাখাসমূহের যৌথ উদ্যোগে
কুদুকছড়ি নির্বাণপুর বনবিহার গেইট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাঙামাটি
– খাগড়াছড়ি সড়ক হয়ে কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে কুদুকছড়ি বাজারে সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা
‘এক দেশে দুই শাসন, মানি না-মানবো না; খাগড়াছড়িতে হামলা কেন, প্রশাসনের জবাব চাই’সহ
নানা শ্লোগান দেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য
চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর রাঙামাটি জেলা সভাপতি তনুময় চাকমার সভাপতিত্বে
ও সাধারণ সম্পাদক চয়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন , হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয়
সভাপতি নীতি চাকমা ও জেলা সভাপতি রিপনা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সাংগঠনিক
সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা ও এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি পলাশ চাকমা।
সমাবেশে ছাত্রনেতা তনুময়
চাকমা বলেন, যে আশা নিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটানোর আন্দোলনে সামিল হয়েছিলাম এক
বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের সেই আশা পূরণ হয়নি। দেশে গণঅভ্যুত্থানের
ফসল আত্মসাৎ করা হয়েছে, নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে।
তিনি বলেন, ইউপিডিএফ
ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে পাহাড়ের জুম্ম জনগণ ২০২৪ সালের হাসিনার ডামি নির্বাচনে ২৭টি
ভোট কেন্দ্রে শূন্য ভোটের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচারী শাসকদের কিভাবে
বয়কট করতে হয়, যা সমতলের কোন রাজনৈতিক দল তা করতে পারেনি।
তিনি বলেন, দেশে ফ্যাসিস্ট
হাসিনার পতন হলেও পাহাড়ের ফ্যাসিস্ট শাসনের কোন পরিবর্তন হয়নি। পাহাড়ে সেই ফ্যাসিস্টরা
এখনো শাসক হয়ে শাসন-শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
পাহাড়ের মুক্তিকামী
জনগণ নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সমতলে
গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও পাহাড়ে জারি রয়েছে এখনো আগেকার সেনাশাসন। দেশের একটি অংশে
সেনাশাসন জারি রেখে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আমরা যারা অভ্যুত্থানের
পক্ষে আন্দোলন করেছি আমাদের উপর এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের মতোই দমন-পীড়ন জারি রাখা
হয়েছে। আমাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য নানা ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করা
হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে হাসিনার দোসররা দিব্যি এখনো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,
সমতলে গণতন্ত্র আর পাহাড়ে সেনাশাসন কেন? এক দেশে দুই নীতি কেন? আমরা দেশের মধ্যে অধিকার
নিয়ে নিয়ে বসাবাস করতে চাই, কিন্তু আপনারা বার বার দুই নীতি জারি রেখে আমাদেরকে দূরে
ঠেলে দিচ্ছেন। মনে রাখবেন, পাহাড়ের মুক্তিকামী জনগণ অতীতে যেমন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে
লড়াই করেছে, ভবিষ্যতে নব্য ফ্যাসিবাদকেও রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে
বলেন, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা
চালিয়ে আমাদের ভাই জুনান, রুবেল, ধনরঞ্জনকে গুলি ও নির্যাতন করে এবং অনিককে গুলি পিটিয়ে
হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর বিচার আমরা এখনো পাইনি। নামমাত্র তদন্ত কমিটি করা হলেও
এখনো সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে
বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বিচ্ছিন্ন হতে চায় না, তারা সম্পৃক্ত হতে চায়। তাই
পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্যা তা যদি প্রকৃত সমাধান চান তাহলে সাংবিধানিক স্বীকৃতি
ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নিয়ে তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করুন।
নীতি চাকমা বলেন, ৫
আগস্ট হাসিনার পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম সমতলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি
কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে। কিন্তু তা হয়নি, উল্টো এখন আগের চেয়েও দমন-পীড়ন বৃদ্ধি করা
হচ্ছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য
চট্টগ্রামে কোন সরকারই গণতান্ত্রিক শাসন চায় না উল্লেখ করে বলেন, ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট
হাসিনার পতনের পরদিন সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবিতে রাঙামাটিতে ছাত্র-জনতা সমাবেশ করতে
গেলে সন্তু লারমার জেএসএস ও সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছিল। এতেই বুঝা গেছে পাহাড়ে সেনাশাসনের
দাপট কমেনি। আজকে খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কোয়ারে পুলিশের সামনে ও সেনা ব্রিগের পাশে
ইউপিডিএফের বিক্ষোভ সমাবেশে সেনাবাহিনীর গড়া সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে।
এ ঘটনা আবারো প্রমাণ করেছে সেনাবাহিনী এখনো আগের মতো ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয়
দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক
সময়ে সেনা অভিযানের নামে পাহাড়ে প্রতিনিয়তই ধরপাকড়, তল্লাশি, হয়রানির ঘটনা ঘটছে। নিরপরাধ
বমদের এখনো কারাগারে আটক করে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পাহাড়িরা তাদরে
ন্যায্য অধিকার স্বায়ত্তশাসনের কথা বললে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তকমা দিয়ে অন্যায় দমন-পীড়ন
চালানো হচ্ছে।
তিনি খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের
সমাবেশে হামলারকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফাতর ও শাস্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন
প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার
স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান
জানান।
যুবনেতা প্রিয়তন চাকমা
বলেন, পাহাড় ও সমতলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এই আশায় আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের
আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। হাসিনার পতন হলেও আজকে খাগড়াছড়িতে সেই হাসিনার আমলে রাষ্ট্রীয়
বাহিনীর মদদে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা দিন দপুরে প্রকাশ্যে ইউপিডিএফের সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের
ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে, গুলিবর্ষণ করেছে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে
কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের
এক বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে হাসিনার সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত দমনমূলক
ও অগণতান্ত্রিক ১১ দফা নির্দেশনা বহাল রয়েছে। ফলে নারী ধর্ষণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন এখনো
বন্ধ হয়নি।
বিশিষ্ট মুরুব্বি পলাশ
চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম যেহেতু বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই আমরা আমাদের
ন্যায্য দাবি জানানোর জন্য এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে ও সামিল
হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
রিপনা চাকমা বলেন, ৫
আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
এখনো প্রশাসনের নাকের ডগায় সেনা-সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা মানুষের ওপর গুলি করে,
শিশুকে কোল থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাকে ধর্ষণ করা হয়। এখনো আমাদের বোনদের ধর্ষণের পর
আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসিনার
শাসনামলের মতো উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। শুধু সেটলার নয়, সেনাবাহিনী কর্তৃকও
ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আমরা নিরাপত্তার প্রধান হুমকি এই ভক্ষক সেনাবাহিনী চাই না।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।