পেহেলগামে হামলার হোতাসহ ৩ জঙ্গি নিহত

Google Alert – সেনাবাহিনী

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ নিতে ‘অপারেশন মহাদেব’ শুরু করেছে ভারত। শ্রীনগরের উপকণ্ঠে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে ৩ জঙ্গি।

এর মধ্যে পেহেলগামে জঙ্গি হামলার হোতা সুলেইমান শাহ ওরফে হাসিম মুসা আছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি।

হাসিম মুসা পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সদস্য। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি)-এর একজন সাবেক কমান্ডোও।

সেনাবাহিনীতে থাকাকালেই অস্ত্র চালনা-সহ বিভিন্ন অভিযান চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মুসা। এর পরই হাফিজ সাঈদের গোষ্ঠী লস্কর ই-তৈয়বায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

সোমবার সকালে শ্রীনগরের কাছে দাচিগাম জঙ্গলে গোপন আস্তানায় কয়েকজন জঙ্গি আছে বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান শুরু হয়।

এলাকাটিতে যৌথ অভিযানে নামে ভারতীয় সেনাবাহিনী, সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ।

অভিযানে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাবাহিনী। গোয়েন্দা এক সূত্রে বলা হয়, গুলিতে নিহত হয়েছেন এলইটি সদস্য হাসিম মুসা।

পেহেলগামে হামলায় মুসার সঙ্গে নিহত আরেক জঙ্গিও জড়িত ছিল বলে জানায় এনডিটিভি। গত ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল ২৬ জন। তাদের বেশির ভাগই ছিল পর্যটক।

শ্রীনগরের দাচিগামে সোমবারের অভিযানে নিহত অপর দুই জঙ্গির নাম আবু হামজা এবং ইয়াসির। এই দু’জনও মুসার মতো পাকিস্তানের বাসিন্দা এবং লস্কারের সদস্য বলে জানিয়েছেন শ্রীনগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন সুপার জিভি সন্দীপ চক্রবর্তী।


অভিযানের নাম কেন ‘অপারেশন মহাদেব’?

অভিযানটি যেখানে চালানো হয়েছে সেই এলাকাটি শ্রীনগরের জাবারওয়ান পর্বতমালার মহাদেব শৃঙ্গের আশপাশের ঘন জঙ্গলে ঢাকা। বছরের অর্ধেক সময় এলাকাটি পুরু বরফে ঢাকা থাকে। মহাদেব শৃঙ্গ এলাকায় জঙ্গিদমন অভিযান চালানো হচ্ছে। তাই এই অভিযানের কোড নাম ‘অপারেশন মহাদেব’।

এর আগে কাশ্মীরে পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় ভারতীয় বিবাহিত নারীদের স্বামীদের হত্যা করে মাথার সিঁদুর মুছে ফেলেছিল যে জঙ্গিরা, সেইসব জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের জবাব দিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত শুরু করেছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’।

সেই অভিযানের নাম রাখা হয়েছিল ভারতীয় আবেগকে মাথায় রেখে। এবারও কাশ্মীরে অভিযান মহাদেবের নাম রাখার ক্ষেত্রে ভারতীয় আবেগকেই মর্যাদা দিয়েছে সেনাবাহিনী। অভিযান এখনও চলছে। বিস্তারিত তথ্য মঙ্গলবার জানাতে পারে সেনাবাহিনী।


অভিযানের পরিকল্পনা কীভাবে হল?

মহাদেব শৃঙ্গে ঘন জঙ্গলের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল তিন জঙ্গি। নিরাপত্তা বাহিনী টানা ১৪ দিন ধরে তাদের উপর নজরদারি করে — শুধু শারীরিক পর্যবেক্ষণ নয়, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারিও চলছিল।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জুলাইয়ের শুরুর দিকে সন্দেহজনক এক ‘চীনা আল্ট্রা রেডিও’ সংকেত ধরা পড়ে। এই রেডিও ডিভাইসটি লস্কর-ই-তৈয়বা এনক্রিপ্টেড বার্তার জন্য ব্যবহার করে বলে জানিয়েছে সূত্র।

ডিভাইসটিকে ইন্টারসেপ্ট করে জঙ্গিদের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সেই তথ্যের ওপর নির্ভর করে সোমবার ‘অপারেশন মহাদেব’ শুরু করা হয়।

সন্দেহ ছিল, দাচিগামের অরণ্যে পেহেলগামে হামলাকারী জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে। এই শৃঙ্গ উচ্চতায় অবস্থিত, এবং জঙ্গিরা জঙ্গলযুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ, ২৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও ৪ প্যারা ইউনিটের যৌথ বাহিনী তিন জঙ্গিকে ঘিরে ফেলে এবং আচমকা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের খতম করে।

এর আগে ১১ জুলাই, বৈসরণ এলাকায় একটি চীনা স্যাটেলাইট ফোন সক্রিয় অবস্থায় ধরা পড়ে, যা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর কেড়েছিল। এরপর সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সিআরপিএফ যৌথভাবে পুরো এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালায়।


অস্ত্রভাণ্ডার ও হামলার প্রস্তুতির প্রমাণ

অপারেশনের সময় গোপন ঘাঁটি থেকে উদ্ধার হয়েছে কারবাইন, একে-৪৭ রাইফেল, ১৭টি রাইফেল গ্রেনেডসহ বহু অস্ত্রশস্ত্র। নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, এই জঙ্গিরা জম্মু ও কাশ্মীরে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এনডিটিভি-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, গভীর অরণ্যের ভেতরে জঙ্গিদের ঘাঁটিতে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে রয়েছে। অভিযানের পর পুরো এলাকায় তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *