Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা
টাইলস মিস্ত্রী মো. সাইদুল থাকেন রাজধানীর সূত্রাপুরের মালাকাটোলা এলাকায়। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে। এ ঘটনায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন সাইদুল। মামলায় ‘আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা’ হিসেবে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ডা. মো. লকিয়ত উল্ল্যাহ’কে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সেই লকিয়তের একাধিক ছবিতে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকে একাধিক পোস্টে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে লকিয়ত গিয়েছেন মালয়েশিয়ায়! সেখানেই এসব ছবি তোলা হয়েছে!
তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে লকিয়তের মালয়েশিয়া সফরের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি সিভয়েস২৪। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর বংশাল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন টাইলস মিস্ত্রী মো. সাইদুল। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার ৯১ নম্বর আসামি ডা. মো. লকিয়ত উল্ল্যাহ। যাকে ‘আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ডা. লকিয়ত উল্ল্যাহ।
এজাহারে সাইদুল উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে বংশাল থানা এলাকায় বিজয় মিছিলে যোগ দেন তিনি। থানার সামনের সড়কের ওপর প্রধান আসামির নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। ওই সময় তাকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক যখম করা হয়।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি বায়োফার্মা ও বায়োগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী ডা. লকিয়ত উল্ল্যাহ। গত বছর সরকার পতনের আগেও যার সঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ থেকে শুরু করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ—সকলের সঙ্গেই ছিল দহরম-মহরম সম্পর্ক। যার প্রমাণও রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে৷
আওয়ামী লীগের আমলের আরেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গেও ছিল লকিয়তের সখ্যতা
একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের আমলে ডা. লকিয়ত উল্ল্যাহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে নিতেন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। বিনিময়ে তিনি অর্থের যোগান দিতেন। এটি ছিল একপ্রকার ‘ওপেন সিক্রেট’। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর নিজের খোলসও পাল্টে ফেলেছেন লকিয়ত উল্ল্যাহ।
এদিকে, গত ১১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখান থেকে ফেরেন গত বুধবার রাতে। তিন দিনের এই সফর চলাকালে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠকে অংশ নেন প্রফেসর ইউনূস। এ সফরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি ‘নোট অব এক্সচেঞ্জ’ সই করেছে বাংলাদেশ।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নৌকা প্রতীকের আদলে তৈরি ফুলের তোড়া দিচ্ছেন লকিয়ত উল্ল্যাহ
প্রধান উপদেষ্টার এই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফর শেষ না হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব ডা. লকিয়তের সঙ্গে ড. ইউনূস, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ সফরে থাকা বিভিন্ন সদস্যের হাস্যোজ্বল ছবিতে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জুলাইযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘যে মানুষ আওয়ামী লীগ বলতেই পাগল ছিলেন, স্বৈরাচারী দলকে টাকাপয়সা দিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছেন—তিনি আজ হাজার তরুণ-শ্রমিকের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পান কী করে! লকিয়ত জুলাই আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিও! কারা লীগের প্রেতাত্মাদের পুনর্বাসন করছেন—সেটি এখন বড় প্রশ্ন।’
সফরের বিষয়ে জানতে ডা. লকিয়ত উল্ল্যাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব দেননি।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. সাইদুল বলেন, ‘আমি টাইলস এর কাজ করতাম। জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হওয়ার পর কাজকর্মও করতে পারি না এখন। আপনার (প্রতিবেদক) কাছেই শুনলাম মামলার একজন আসামি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদেশে ছবি তুলেছেন। এতে খুব কষ্ট পেলাম।’
তবে জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল ফারুক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।