Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ মালয়েশিয়া যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সফরে অভিবাসন ও বিনিয়োগ অগ্রাধিকার পাবে বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। এই সফরে অনেক সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এই সফরের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হবে। সফরের মূল ফোকাস অভিবাসন নিয়ে আলাপ, দ্বিতীয় ফোকাস হচ্ছে বিনিয়োগ’।
গতকাল ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফর’ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘আগামী ১২ আগস্ট একটি বিজনেস কনফারেন্স আছে। এরপর ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (ইউকেএম) সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। এই অনুষ্ঠানে আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম উপস্থিত থাকবেন । মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১২ আগস্ট একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আছে। সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে সুসম্পর্ক আছে, সেটা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
সফরসঙ্গী যারা
প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান বলেন, ‘আগামী ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। তার সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছেন। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা
ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন।’
শাহ আসিফ রহমান জানান, সফরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে, সেখানে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রধান উপদেষ্টাকে গ্রহণ করবেন। ১২ আগস্ট পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকের পর দুদেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
যেসব এমওইউ’র সম্ভাবনা
দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যে সমঝোতা স্মারকগুলো (এমওইউ) সই হবে তা হলো, প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা; তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণসহ জ্বালানি সহযোগিতা; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ মালয়েশিয়া (আইএসআইএস); বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও চিপ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মিমোস (এমআইএমওএস) এর সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক চেম্বার এফবিসিসিআইর সঙ্গে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়িক চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা।
সম্ভাব্য এক্সচেঞ্জ নোটগুলো হলো, হালাল ইকোসিস্টেম, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমি এবং উচ্চ শিক্ষাখাতে সহযোগিতা বিষয়ক নথি সই।
* প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় *
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান জানান, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর একটি সংবাদ সম্মেলন এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্মানে একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। একই দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা একটি ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নেবেন এবং এর পরপরই মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্নখাতে নতুন কর্মী নিয়োগ, অধিক সংখ্যক পেশাদার নিয়োগ, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
শাহ আসিফ আরও জানান, শ্রমবাজারের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রের সঠিক ব্যবহার, কৃষিসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়গুলোও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর অক্টোবরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফরে আসেন, যেটি ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কোনো সরকারপ্রধানের সফর ছিল।