প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

খাগড়াছড়ির দুর্গম দুই গ্রামে বিশুদ্ধ পানির স্বপ্নপূরণ: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের অবহেলিত খাগড়াছড়ির দুর্গম কারিগর পাড়া ও রেজামনি পাড়ার পাঁচ শতাধিক বাসিন্দার জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিদ্যুৎ, রাস্তা এবং বিশুদ্ধ পানির মতো মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই গ্রাম দুটিতে এবার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই মানবতাবাদী প্রকল্পের নির্দেশদাতা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান-এর দূরদর্শী নেতৃত্ব বর্তমানে ব্যাপক প্রশংসার কেন্দ্রে।

গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও সেনাপ্রধানের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ:

প্রায় তিন মাস আগে রেজামনি পাড়া আর্মি ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান স্থানীয়দের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এ সময় গ্রামবাসী তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশুরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সেনাপ্রধানকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি গ্রামবাসীদের সামনেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন, যা এলাকাবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার করে।

সোলার প্যানেল প্রকল্প: একটি নতুন ভোরের সূচনা:

সেনাপ্রধানের নির্দেশের পরপরই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি সোলার প্যানেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গ্রামবাসীর চোখে-মুখে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এই প্রকল্পটি তাদের জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেবে এবং এটিকে তারা “ওপরওয়ালার আশীর্বাদ” হিসেবে দেখছেন।

আরও পড়ুন:

সতর্কবার্তা: আগামী দুই দিনের মধ্যে বন্যা পূর্বাভাস

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে: এক নজরে জানুন কোন গ্রেডে কত বাড়ছে

বিএনপি বহিষ্কার করল এক কেন্দ্রীয় নেতাকে

কারিগর পাড়ার ৭০ বছর বয়সী কৃষক সুবীন্দ্র লাল কারবারি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “আমরা দুর্গম পাহাড়ের কুয়া ও টিউবওয়েল থেকে যে পানি সংগ্রহ করতাম, তাতে প্রচুর আয়রন ছিল। সেনাপ্রধানের কাছে আমাদের সমস্যার কথা জানালে তিনি দ্রুত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। আমরা মনে করি সেনাপ্রধানের এই উদ্যোগ ওপরওয়ালার আশীর্বাদ।”

প্রকল্পের কারিগরি দিক ও সুফল:

রাজলক্ষ্মী অ্যান্ড রাজ পিউ ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব বড়ুয়া জানান, এই সোলার প্যানেল সিস্টেম প্রতিদিন চার হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার লিটারের দুটি এবং ২ হাজার লিটারের একটি সহ মোট ৪ হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাবার পানি পাবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

দুর্গম পাহাড়ের উন্নয়নে সেনাবাহিনীর বহুমুখী অবদান:

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেবল সীমান্ত সুরক্ষা নয়, বরং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও প্রসারিত হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য সীমান্ত সড়ক নির্মাণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব এনেছে। যে পথ পাড়ি দিতে আগে দুই-তিন দিন লাগত, এখন তা মাত্র দুই-তিন ঘণ্টায় সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়াও, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী নামকরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করছে। বাজারগুলোতে সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এমনকি পর্যটন শিল্পের বিকাশেও সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল ক্যাম্প: সেবার হাত বাড়িয়ে:

সরেজমিনে ১ নম্বর খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে স্থাপিত সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল ক্যাম্পে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি উন্নতমানের ওষুধও বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। গোগড়াছড়ি থেকে হাতের চামড়ার ইনফেকশনের চিকিৎসার জন্য আসা টিমরশ মারমা জানান, তার ছয় বছর বয়সী বাচ্চার হাতের অবস্থা আগে অনেক খারাপ ছিল, কিন্তু এখানকার ওষুধ খেয়ে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। মেডিক্যাল ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট মুনিম ইসলাম সামিন জানান, ক্যাম্পে চারজন ডাক্তার কাজ করছেন, যার মধ্যে নারীদের চিকিৎসার জন্য একজন আলাদা গাইনি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, মুমূর্ষু রোগীদের দুর্গম অঞ্চল থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসতেও সেনাবাহিনী সহযোগিতা করে। কিছু ক্ষেত্রে, মুমূর্ষু রোগীদের নিজস্ব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য এক বিরাট স্বস্তি। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সেনাবাহিনী ১৯ হাজার ৯১২ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে, যার মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১২ হাজার ৫৫৪ জন এবং বাঙালি ৭ হাজার ৩৫৮ জন রোগী অন্তর্ভুক্ত।

এই বহুমুখী জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল দেশের সীমান্ত রক্ষাই করছে না, বরং দুর্গম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করছে।

আল-আমিন ইসলাম/

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *