Google Alert – আর্মি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষে সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনও ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। তার কান্না দেখে শিক্ষার্থীরাও কেঁদেছেন। ইতোমধ্যে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে আহত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এ সময় অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি কম্পারেটিভলি ভালো আছি। আমার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি আহত। আমরা এখন পর্যন্ত আর্মি-বিজিবির কোনও সহায়তা পাচ্ছি না। প্রত্যেক ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপাচ্ছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন। আমাদের প্রক্টর, প্রো-ভিসি আহত। আমাদের প্রায় সব শিক্ষক-ছাত্র আহত। আমরা মেডিক্যালে জায়গা দিতে পারতেছি না। ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হেলমেট পরে আমাদের ছাত্রদের মারতেছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার দফতরে কথা বলেছি, কিন্তু এখনও আমাদের পাশে কেউ নেই।’
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা শান্ত হও, এলাকাবাসী আপনারা শান্ত হোন। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর ধরে আছি, এই গ্রামের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। এটা অন্য একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে ঘটেছে। এই গেমে কেউ হাত দিও না।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সহ-উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা শান্ত হও। আমরা তোমাদের পাশে আছি। এ ঘটনার বিচার হবে।’
প্রসঙ্গত, ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেন—এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত সোয়া ১২টা থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ ও অন্তত ১৮০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ ঘটনায় তাদের পক্ষের আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে। রবিবার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় দর্শন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ঢুকতে চাইলে দেরিতে আসায় বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে মারধর করেন। ছাত্রী তার এক ছেলে বন্ধুকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে দারোয়ানকে ধরতে গেলে ওই এলাকায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও চবির সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
চবি মেডিক্যালের চিকিৎসক মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ‘বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা গুরুতর আমরা তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’