Google Alert – সেনাপ্রধান
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫
ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত পুরো এলাকা। সেখান থেকে মাথায় করে একটি স্ট্রলার নিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি এক শিশু – এএফপি
গাজা সিটি, যেখানে এখনও বাস করে আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ, সামনে সেখানে আসতে চলেছে অন্ধকার দিন। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের যে পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, তাতে সেখানে নতুন করে অভিযান শুরু হলে আরও বেশি দুর্ভোগে পড়বে এই বাসিন্দারা।
গাজায় যুদ্ধের শুরুর দিকে কয়েকমাসে তারা অন্য জায়গায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তবে জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি হলে যুদ্ধ শেষের আশায় তারা আবার গাজা সিটিতে ফেরত আসে। যুদ্ধের সময়টিতে গাজা সিটির বাসিন্দারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়ি থেকে দূরে ছিল। তারা ক্রমাগত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। মানবেতর অবস্থায় থেকেছে।
এরপর গাজা সিটির উত্তরাঞ্চলে ফিরে এসে তারা বাড়িঘর সব ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকতেই দেখেছিল। তারপরও যেখানে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই বসতি গড়ার চেষ্টা করেছে বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস ছিল যুদ্ধ হয়ত শেষ পর্যন্ত শেষ হবে।
কিন্তু গাজা সিটিতে জীবন এরই মধ্যে কঠিন হয়ে পড়েছে। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে নতুন করে অভিযান শুরু করলে এবং ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে দিলে মারাত্মক মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়।
এখন সেখানে বসিন্দাদের দুর্ভোগের নতুন আরেক চক্র শুরু হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। ইসরায়েল সরকার নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালানোর জন্য বরাবরের মতোই আরও একবার গাজা সিটির সব বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য করবে।
কয়েকটি খবরে বলা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়া দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হতে পারে। এই সময়ে দেখা যেতে পারে বিভিন্ন স্থানে কারফিউ, লোকজনকে সরে যাওয়ার একের পর এক নির্দেশ এবং রাস্তায় ফের ক্লান্ত-শ্রান্ত সাধারণ মানুষদের কাফেলা।বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই আতঙ্ক নিয়ে পরিস্থিতি নজরে রাখছে। ইসরায়েল যে পদক্ষেপ নিতে চলেছে, তাতে সামনে তাদের জন্য আছে বড় ঝুঁকি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতা যে বাড়বে সেটি আঁচ করা যাচ্ছে এখনই। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা জয় এমনকি তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য্যকেও পরীক্ষায় ফেলে দিতে পারে। তবে লেবাননে হিজবুল্লাহকে পরাজিত করা, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসন পতনে সহায়তা করা এবং ঘোর শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে বিপর্যস্ত করার পর ইসরায়েল এ অঞ্চলের সুপারপাওয়ার হিসাবে নিজেদের মর্যাদা সুদৃঢ় করেছে- যে দেশটি যুদ্ধ পরিচালনা করে একাধিক শত্রুকে পরাজিত করতে সক্ষম। গাজা সম্পূর্ণ দখল করতে চাওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সমালোচনার ধাক্কায় নিজের কথাও বদলে ফেলেছেন তিনি।
এদিকে, শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা গাজা দখল করতে যাচ্ছি না, আমদের লক্ষ্য হলো গাজাকে হামাসের কবল থেকে মুক্ত করা।’‘গাজাকে অসামরিকীকরণ করা হবে এবং সেখানে একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এমন একটি সরকার, যার প্রতিনিধিরা কেউ প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি, হামাস কিংবা অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের হবে না।’ “আমাদের লক্ষ্য পূরণ হলে একদিকে যেমন আমাদের জিম্মিদের উদ্ধার করা সহজ হবে, তেমনি অন্যদিকে গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে থাকবে না।”
গত ৫ আগস্ট তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নেতানিয়াহু এবং তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয় ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামির। বৈঠকে সেনাপ্রধানের উদ্দেশে উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের লক্ষ্য পুরো গাজা দখলে আনা। এজন্য গাজার সর্বত্র আমাদের অভিযান চালাতে হবে। এমনকি হামাস যেসব অঞ্চলে ইসরায়েলি জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি, সেসব অঞ্চলেও চালাতে হবে অভিযান। আমাদের এই লক্ষ্য যদি আপনার পছন্দ হয়— তাহলে দায়িত্ব পালন করুন, নয়তো ইস্তফা দিন।”
নেতানিয়াহুকে এবার চিঠি ৫ শতাধিক সাবেক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তার
‘গাজা সম্পূর্ণ দখলের’ নির্দেশ নিয়ে ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের দ্বিমত
গাজা দখলে সরকারের নির্দেশ পালন করবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
‘হয় পুরো গাজা দখল করুন, নয়তো ইস্তফা দিন’
বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা নেতানিয়াহুর সঙ্গে একমত হলেও দ্বিমত পোষণ করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, গাজা সম্পূর্ণ দখল হলে তা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ফাঁদ হয়ে উঠবে, সেখানে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং সর্বোপরি ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বর্তমান যে অবস্থা— তাতে গাজা সম্পূর্ণ দখলে নতুন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যকে আমলে না নিয়ে নেতানিয়াহু এবং তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিজেদের অবস্থানেই অটল থাকেন। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও নেতানিয়াহু বলেন গাজা সম্পূর্ণ দখল করাই তার প্রধান লক্ষ্য। তবে এই সাক্ষাৎকার প্রচারের পর নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জানায় ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সৌদি আরব, মিসরসহ বিভিন্ন দেশ। জার্মানি ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়।
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদও নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। ঘরে-বাইরে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার নিজের আগেকার কথা ঘোরালেন নেতানিয়াহু।
এই আঞ্চলিক সুপারপাওয়ার দেশটিকেই ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে যেভাবে নাকাল করেছিল, তার প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহুকে এখন অনেক বেশি সাহসী এবং ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে। তিনি হয়ত এখন ভাবছেন, কে তাকে থামাবে?