ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কি হবে? | চ্যানেল আই অনলাইন

চ্যানেল আই অনলাইন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও পিআর পদ্ধতির জন্য জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের হুমকি এবং নির্বাচন হবে না বলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতার বক্তব্যের পর ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখছেন রাজনীতিবিদরা।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বড় দলগুলোর যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলে এ সংকট দূর করা সম্ভব।সরকার দৃঢ়ভাবে চাইলে নির্বাচন নিয়ে কোন আশঙ্কা নেই।

বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৫ আগস্টের আগে পিআর পদ্ধতির কথা সেসব রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে পাইনি। এ বিষয়ে আমরা বিস্তর আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, আমাদের সমাজ পিআর পদ্ধতির ব্যবস্থায় এই মুহূর্তে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। পশ্চিমা সমাজ যেভাবে দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চিন্তা চেতনায় যে অবস্থানে রয়েছে, আমাদের সমাজ ওই স্তরে নেই। স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা বিভিন্ন সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। বাকশাল হয়েছে। এরশাদের সামরিক আইন হয়েছে। আবার ১৬ বছরে নতুন ফ্যাসিবাদ আমরা দেখলাম। এখানে গণতন্ত্র চর্চার যে জায়গা, সেটি সবসময়ই দুর্বল থেকেছে। আমাদের সেই চর্চা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, এখন হঠাৎ করেই এটি যদি আমরা চালু করতে যাই, একধরনের জটিলতা তৈরি হবে। পিআর পদ্ধতির কথা যারা বলছেন, আমাদের মনে হয় জটিলতা তৈরি করা ছাড়া তাদের আর কোন উদ্দেশ্য নেই। এটি যদি দীর্ঘদিনের দাবি হতো তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু কোন অসৎ উদ্দেশ্যে এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তোলা হচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরও কিছুদিন সময় বাকি। আলাপ- আলোচনায় অনেক কিছুরই সমাধান সম্ভব।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে না পারলে নির্বাচনের ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ চ‌্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ সবসময়ই নির্বাচনের পক্ষে। প্রধান উপদেষ্টা যথাসময়ে নির্বাচন করতে পারবেন বলেও আমরা আশাবাদী। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে যথাসময়ে নির্বাচন হয় কিনা সেই শঙ্কা রয়েছে। তারা যদি যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দেয় তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব।

আবু হানিফ বলেন, তবে এটাও ঠিক যে- এমন গণঅভ্যুত্থানের পর কোন ধরনের বিচার এবং মৌলিক সংস্কার না করে শুধু একটা নির্বাচনই সমাধান নয়। এজন্য মৌলিক সংস্কার করতে হবে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারাই সরকার গঠন করবে, তারা যেন মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করে, সেজন্য ওয়াদা নিতে হবে। সরকার চাইলে মৌলিক সংস্কার শেষ করে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পিআর সংসদের দুই কক্ষেই থাকবে? নাকি শুধুই উচ্চকক্ষে? নিম্নকক্ষে না থাকলেও অন্তত উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি থাকতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির ছাড় দেওয়া উচিৎ। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলে নির্বাচন আদৌ হবে কিনা সেই শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (পার্থ) সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মাতাব্বর চ‌্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা সবসময়ই নির্বাচন চাই। গত ১৭ বছর ভোটের অধিকারের জন্য এদেশের মানুষ লড়াই করেছে। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক হিসাব পাল্টে গেছে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। এখন শধুমাত্র ভোটের হিসাবের মধ্যে দেশের মানুষ নেই। কিন্তু ভোটের বিকল্পও অন্য কিছু নেই। এই পরিস্থিতি রাজনীতিবিদদেরকেই মোকাবেলা করতে হবে।

ইলিয়াস মাতাব্বর বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য তোড়জোড় শুরু হলো। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, চরমোনাই ইত্যাদি দলগুলো যদি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়, তাহলে তো নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। এই দলগুলো ছাড়া নির্বাচন কি হবে? হবে না। শেখ হাসিনার ২০১৪, ১৮ এবং চব্বিশের মতো একতরফা নির্বাচন তো হবে না। সেজন্য সব রাজনৈতিক দলের উচিৎ জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে ছোট ছোট কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখা। নাহলে এর ফলাফল সবাইকে ভুগতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, ‘সংসদে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে, পিআর হতে হবে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে। সেই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করবো। এটার কারণ হচ্ছে ৫৪ বছরের নির্বাচনের পদ্ধতিতে আমরা দেখেছি এখানে ফেয়ার ইলেকশন কখনো নিশ্চিত করা যায়নি।’ জামায়াতে ইসলামী অবশ‌্য শুধু ঘোষণায় সীমাবদ্ধ নেই। এই ইস‌্যুতে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে দলটি।

 জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, একটি নতুন সংবিধানের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তার লাশটা ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী চ‌্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের দেশে দীর্ঘদিন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তার ভোটাধিকার থেকে অনেক দিন বঞ্চিত রয়েছে। সব রাজনৈতিক দল যদি একইভাবে চিন্তা করত তাহলে বিষয়টি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহজ করত। জনদাবির প্রেক্ষিতেও এটা কাম্য ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতির যে দাবি তোলা হচ্ছে সেটি আমাদের দেশে কতটা প্রাসঙ্গিক এবং আমাদের দেশের মানুষের সাক্ষরতার হার অনুযায়ী তাদেরকে বিষয়টি বোঝানোর জন্যও অনেক সময় প্রয়োজন। নাহলে তারা যথাযথভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না। সুতরাং কোন কোন দল মনে করতে পারে যে, পিআর পদ্ধতির কথা বলে তারা নিজেদের জন্য কিছুটা সময় পেতে পারে।

ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে কোন আশঙ্কা নেই। সরকারের দৃঢ়তার উপর বিষয়টি নির্ভর করে। আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচনে কোন দল ভোটে আসবে না, এটাও অমূলক। এনসিপি যেহেতু এখনও নিবন্ধিত দল নয়, তাদের কথা নাই ধরলাম। জামায়াতে ইসলামীর জন্যও বাধাহীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং সরকার দৃঢ়ভাবে চাইলে সব রাজনৈতিক দলই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, ভোট নিয়ে কোন আশঙ্কা থাকার কথা নয়।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *