Samakal | Rss Feed
ফেরারি আসামি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য
বাংলাদেশ
সমকাল প্রতিবেদক <time class="op-modified" dateTime="2025-09-04"2025-09-04
2025-09-04
আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন–এমন বিধান আইনে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটিসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আরও কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে কমিশন।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আরপিও (সংশোধন) খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ ভেটিংয়ের জন্য তারা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইসির প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করে পরে তা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে। সেখানে অনুমোদিত হলে, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনে সংশোধনী যুক্ত হবে।
ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য করার বিধান সংযোজনের সুপারিশ করেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তখন এর সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে ইসি বলেছিল, এমন বিধান অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে।
আগে দ্বিমত জানিয়ে এখন কেন প্রস্তাবটি ইসি গ্রহণ করল–এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করেছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মনে করেছে বিধানটি রাখা ভালো হবে। সামনে যদি এটির অপব্যবহার হয়, তখন প্রয়োজনে আবার সংশোধন করা যাবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেউ অভিযুক্ত হলে তাঁকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধানের প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশনের। তবে এটি ইসির প্রস্তাবে রাখা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেরারি আসামিসংক্রান্ত ইসির প্রস্তাব অনুমোদন পেলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ আগেই হারিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়াতে পারবেন কিনা–প্রশ্নে সানাউল্লাহ বলেন, এটি সময় বলে দেবে। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের নিবন্ধন স্থগিত থাকলেও প্রতীক সংরক্ষিত থাকবে। এটি কাউকে দেওয়া হবে না।
তিনি জানান, আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবে ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা ছাড়াও একক প্রার্থিতায় ‘না’ ভোট, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ না রাখা, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল, জোটবদ্ধ হলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট, জামানত ৫০ হাজার টাকা, ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে নির্বাচনী ব্যয়ের বিধানসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে।
সানাউল্লাহ বলেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ ছিল। জাতীয় নির্বাচনে এটি রাখা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ হলে, নিবন্ধন স্থগিত করার বিষয় আরপিওতে অস্পষ্ট ছিল, সংশোধনীতে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে।
‘না’ ভোটের বিধান
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে সেখানে ‘না’ ভোট হবে। আগে একক প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হতো। আমরা বলছি, এখন প্রার্থীকে ‘না’ ভোটের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। ‘না’ ভোট জিতে গেলে সেখানে পুনরায় ভোট হবে। দ্বিতীয়বারও ‘না’ ভোট জয়ী হলে একক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোটারপ্রতি ব্যয় ১০ টাকা
বিদ্যমান আইনে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের সুযোগ ছিল। সংশোধিত আরপিওতে ভোটারপ্রতি ব্যয় ঠিক রেখে ২৫ লাখ টাকার সীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ইসি।
আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ভোটার গাজীপুর-২ আসনে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি-১ আসনে ২ লাখ ১২ হাজার ১২ জন। গাজীপুরের আসনটিতে ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের সুযোগ থাকছে প্রার্থীর।
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল
সানাউল্লাহ বলেন, হলফনামায় কোনো প্রার্থী মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে ইসি স্বপ্রণোদিত হয়ে বা কোনো তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে রিকল করতে পারবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হলে তাঁর প্রার্থিতা, এমনকি সংসদ সদস্য পদও বাতিল হবে। তবে পাঁচ বছর মেয়াদের পর তা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে থাকবে না।
আরও যেসব সংশোধনী
আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় বিদ্যমান বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বলতে সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ডকে যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও নিবন্ধিত দলগুলোর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন।
প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে। দুই প্রার্থীর ভোট সমান হলে পুনর্নির্বাচন হবে। ইভিএমসংক্রান্ত যাবতীয় প্রভিশন বিলুপ্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অবহেলাজনিত শাস্তির বিধান সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ইসিকে জানাতে হবে।
ইসির অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক ও সংবাদকর্মীরা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে শুরু থেকে যারা থাকবেন, তাদেরই শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। কেউ ভোটকেন্দ্রের ভেতর অযথা ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।
ভোটে প্রভাব খাটালে প্রার্থীর ক্ষেত্রে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দলের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইত্যাদি ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানোর ব্যাপারে প্রার্থী, দল, সংস্থাসহ সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
লাভজনক পদে যারা আছেন বলে গণ্য হবেন এবং যারা প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার আছে–এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে অংশ নিতে পারবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটির সভাপতি বা সদস্যদের ভোটে অংশ নিতে চাইলে ওইসব পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার বাতিল করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারেও আচরণবিধি ভঙ্গ হয়–এমন কিছু করা যাবে না।
সংশোধনীতে প্রার্থীদের ব্যয়ের নিরীক্ষা (অডিট) একনিষ্ঠভাবে দেখার সুপারিশ করা হয়েছে। কোনো দল পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পেলেও বার্ষিক রিটার্ন বা দলীয় ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হবে। আগে দলগুলো ব্যক্তিপর্যায় থেকে ১০ লাখ ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৫০ লাখ পর্যন্ত অনুদান নিতে পারত। এটি উভয় ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে এবং লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করতে হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বদলি তপশিল ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ১৫ দিন পর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হয়। এখানে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ডিআইজিদের অন্তর্ভুক্তি ছিল না। সংশোধনীতে এটি যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরপিওর কিছু স্থানে ভোট শব্দ বদলে নির্বাচন করা হয়েছে।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, অনিয়ম হলে রিটার্নিং অফিসার একটি বা একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সংবাদকর্মীসহ কে, কতক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে থাকবেন, তা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রিসাইডিং অফিসারকে দেওয়া হয়েছে।