বনবিভাগ কর্তৃক দীঘিনালার এক ব্যক্তির নিজস্ব বাগান থেকে কর্তনকৃত গাছ জব্দ

CHT NEWS

সেনাবাহিনীর নির্দেশে জব্দের কথা জানিয়েছে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের
এক সদস্য


বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫

বনবিভাগের বাঘাইহাট রেঞ্জের কর্মকর্তা কর্তৃক খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার
বাসিন্দা মিন্টু চাকমার নিজস্ব বাগান থেকে কর্তনকৃত গাছ জব্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ
পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) বিকাল ৩টায় দীঘিনালার কবাখালী ইউনিয়নের দীঘিনালা-মারিশ্যা
রোডের বটতলা নামক স্থান থেকে তার দুই জীপ গাছ জব্দ করা হয়।

মিন্টু চাকমার বাড়ি দীঘিনালার মাস্টার পাড়ায়। তার পিতার নাম কুনেন্টু চাকমা।

বাগান মালিক মিন্টু চাকমা বলেন, ‘আমার বাবা একজন পেশায় শিক্ষক ছিলেন। তিনি
২০০৬ সালে পেনশনে যান। তাঁর পেনশনের টাকা দিয়ে ৩নং কবাখালী ইউনিয়নের ৫৩ নং কবাখালী
মৌজার ধন্যামা ছড়া মোনে (পাহাড়ে) রোপনকৃত সেগুন গাছ ও জায়গাসহ একটি বাগান ক্রয় করি।
পরিবারে আর্থিক সমস্যার কারণে ওই বাগান থেকে বিক্রয় উপযোগী কিছু গাছ কর্তন করে দীঘিনালা
নিয়ে আসার জন্য মারিশ্যা রোডে রাখি। সে গাছগুলো বাঘাইহাট বনবিভাগের লোকজন এসে জব্দ
করে বাঘাইহাটে নিয়ে যায়। বন আইনের কোন ধারায় আমার নিজস্ব বাগানের গাছ জব্দ করা হলো
আমার জানা নেই। আমি চাই আমার গাছগুলো ফেরত দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে বনবিভাগের বাঘাইহাট রেঞ্জের কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জামান বলেন,
‘সরকারের একটা প্রজ্ঞাপন আছে, সেটা নিজস্ব বাগান থেকে হোক, বাড়ি নির্মাণের জন্য হোক
গাছ কর্তন করতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা আমাদের অফিস
থেকে অনুমোদন নিতে হবে। রিজার্ভ ফরেষ্টের পাশে কর্তন করা গাছ জমা রাখা সেটা একটা অপরাধ।
বাগান মালিক মারিশ্যা রোডের পাশে যে গাছগুলো রেখেছিল সে বিষয়ে আমাদেরকে আগে জানানো
দরকার ছিল।’

বন কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, নিজস্ব বাগান থেকে গাছ কর্তন করে
রাস্তার পাশে রাখলেই গাছ জব্দ করবেন- এটা কোন আইনে? রাস্তা কি বনবিভাগের? নিজের বাগান
থেকে গাছ কর্তন করলে যে আপনাকে অবগত করতে হবে সেটা বন বিভাগের কোন আইনি ধারায় লেখা
আছে?

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে বন আইন ১৯২৭-এর ৪৫ এবং ৬৫ ধারার
একটা আইন আছে, সে আইনি ধারায় জব্দ করেছি।

তাঁর কাছ থেকে আরো জানতে চাওয়া হয় যে, সাজেকে বনাঞ্চল ধ্বংস করে উনয়নের
নামে পর্যটন, মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে
আপনাদের বন আইন কোথায় যায়? অথচ আপনারা সাজেকের বাসিন্দারা ঘর, বিহার, স্কুল কলেজ নির্মাণ
করলে বনআইন দেখিয়ে তাতে বাধা দেন। এখন আবার মৌজার আওতাধীন এলাকায় নিজস্ব বাগান থেকে
গাছ কর্তন করলেও অনুমোদনের নামে হয়রানি করছেন। এ বিষয়ে তিনি সুদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে তিনি এসব পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন বলে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের বাঘাইহাট রেঞ্জে কর্মরত এক ব্যক্তি
বলেন, “আমাদেরকে গতকাল ৩টার সময় বাঘাইহাট সেনা জোনের জোন কমাণ্ডারের এফএস মো. শরীফ
গাছগুলো জব্দ করার নির্দেশ দেয়। আমরা সেখানে গিয়ে দেখি যে গাছগুলো কর্তন করা হয়েছে
সেগুলো নিজস্ব মালিকানার বাগান থেকে এবং দীঘিনালার ৫৩ নং কবাখালী মৌজার আওতাধীন। তবু
বাধ্য হয়ে গাছগুলো জব্দ করে দুটি জীপ গাড়ি দিয়ে বাঘাইহাটে নিয়ে আসি। আমরা সরকারি বনবিভাগের
দায়িত্বে থাকলেও অন্যজনের নির্দেশনায় চলতে হয়।

দীঘিনালার ৫৩ নং কবাখালী মৌজার হেডম্যান পাপেল দেওয়ান বলেন, মৌজার আওতাধীন
বাগান কর্তন করলে হেডম্যানের কার্যালয় থেকে অনুমোদন দিয়ে থাকি। সেখানে বনবিভাগের কোন
অনুমোদন লাগার কথা না। তাছাড়া দীঘিনালা উপজেলার মৌজার অধীনে থাকা গাছ বাঘাইছড়ি বনবিভাগের
কর্মকর্তা জব্দ করতে পারেন না।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *