Google Alert – সশস্ত্র
তেল আবিবে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালীন কঠোর হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ। গাজায় যুদ্ধ আরও বিস্তারের পরিকল্পনার প্রতিবাদে এবং বন্দিমুক্তির জন্য সরকারকে চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বন্দিদের স্বজনরাও। রোববার (৩ আগস্ট) ইসরায়েলের একটি ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা, যার মধ্যে ছিলেন গাজায় আটক থাকা বন্দিদের পরিবারের সদস্যরাও।
তাদের দাবি ছিল—সরকার যেন দ্রুত একটি বন্দিমুক্তি চুক্তি করে, যাতে জিম্মিদের নিরাপদে ফেরানো যায়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানায়, পুলিশ খুব দ্রুত ওই এলাকায় পৌঁছে অবরোধ সরিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজনকে ‘পাবলিক ডিসঅর্ডার’-এর অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বিক্ষোভের মূল ক্ষোভ ছিল—ইসরায়েল সরকারের যুদ্ধ বিস্তারের পরিকল্পনা ও জিম্মিদের নিরাপত্তা নিয়ে দুর্বল কৌশল।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এক বন্দি নিমরোদ কোহেনের মা বলেন, “আমি এমন কোনো অভিযানের বিরোধিতা করি, যা আমার ছেলের জীবনকে হুমকিতে ফেলতে পারে। শুধু একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিই তাকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারে।” বন্দিদের পরিবারের পক্ষে এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জনমতকে বিভ্রান্ত করছেন। তারা বলেন, “বন্দিমুক্তির কথা বলে যুদ্ধ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আসলে এক ধরনের প্রতারণা।” বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “এই বন্দিরা এমনিতেই মৃত্যুর মুখে, যুদ্ধ বাড়ালে তাদের আর বাঁচানো যাবে না।”
রোববারই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়াল জামির জানান, গাজায় পুরো মাত্রায় আক্রমণ চালানো হলে ইসরায়েলি বন্দিদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “বিপুল সামরিক অভিযান হলে বন্দিরা ঝুঁকিতে পড়বে, এবং এটি মুক্তির পথ নয়।”
বিক্ষোভের পেছনে আরও এক আবেগপ্রবণ কারণ যোগ হয় শুক্রবার, যখন হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ইসরায়েলি বন্দি এভিয়াতার ডেভিড চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন, হাড় বেরিয়ে এসেছে, শরীর ক্লান্ত ও নিস্তেজ। আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসলামী জিহাদের সশস্ত্র শাখা, যেখানে বন্দি রম ব্রাসলাভস্কির সর্বশেষ মুহূর্ত দেখানো হয়—তারপর থেকে তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গাজায় বর্তমানে আনুমানিক ৫০ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন এখনও জীবিত আছেন বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে, ইসরায়েল ১০,৮০০-র বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই চরম নির্যাতন, অপুষ্টি ও চিকিৎসা অবহেলার শিকার—এ দাবি তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলি।
৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬০,৮০০-র বেশি ফিলিস্তিনি—যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েল তা উপেক্ষা করে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযানের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াওভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গাজার ওপর যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলাও চলছে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি