বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসসিআইআরএফ’র উদ্বেগ প্রকাশ

Hill Voice on Facebook

বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসসিআইআরএফ’র উদ্বেগ প্রকাশ

হিল ভয়েস, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: গত ২১ জুলাই ২০২৫ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ (ইউএসসিআইআরএফ) নামের একটি ফেডারেল সংস্থা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গত মে মাসে ঢাকায় সংস্থাটির সদস্যবৃন্দ সফরে আসেন। সীমা হাসান, ইউএসসিআইআরএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক এর রিপোর্টের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে একটি ব্যাপক গণআন্দোলনের রূপ নেয়। সরকার প্রতিবাদকারীদের দমন করতে সহিংস ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু সরকার তা দমন করতে ব্যর্থ হয় এবং পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অবশেষে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। এই সময়ে বিভিন্ন সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত। এই হামলাগুলোর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর গণহামলা ও প্রতিশোধমূলক আক্রমণ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদের আওয়ামী লীগের সমর্থক বা সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের চলমান সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণের অভাবের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যার সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি প্রস্তাবিত শব্দের পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আংশিক সমর্থন জানিয়ে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে বাংলা বিকল্প ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে নারী সংস্কার কমিশন গঠনের পর চলতি বছরের মে মাসে কমিশনটি ৪৩৩টি সুপারিশ দেয়। এর মধ্যে একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব, যা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনকে সম্পূরক করবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে ইসলামপন্থি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দেয় এবং কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে। নারীদের উদ্দেশ্য করে কটুক্তি করার অভিযোগে ৬ নারী হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেন। পরে সংগঠনটি ক্ষমা চায়। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতে একটি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য করে এবং নাদিরা ইয়াসমিন নামের এক নারী অধ্যাপককে হুমকির মুখে কলেজ বদল করতে হয়।

কিছু নারী অভিযোগ করেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রক্ষণশীল ইসলামি মতাদর্শের প্রকাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের মে মাসে, নারীর অধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করা এক অধ্যাপক, নাদিরা ইয়াসমিন, হেফাজতসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর হুমকির মুখে অন্য কলেজে বদলি হন। ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করেছিল, ইয়াসমিনের কর্মকাণ্ড ইসলামের পরিপন্থী। এছাড়াও, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারি মাসে একটি নারী ফুটবল ম্যাচ “ইসলামবিরোধী” আখ্যা দিয়ে বাতিল করতে বাধ্য করে।

সংস্থাটির মতে, ভূমি দখলের ঘটনা ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পটুয়াখালী জেলায় ২১টি হিন্দু পরিবার ১.৫ একর জমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, যা নিয়ে পূর্বে তারা পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেছিল। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা খালিদ হোসেন জানান যে, মসজিদ, মন্দির এবং শ্মশানসহ উপাসনালয়ের অবৈধভাবে দখলকৃত জমি ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট নথিপত্রসহ বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো এখনো এই সমস্যার চলমান অভিযোগ করে যাচ্ছে। ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে মোট ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১,২৩৪টি রাজনৈতিক, ২০টি সাম্প্রদায়িক ও ১৬১টি ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়। এছাড়াও, হিন্দু, আদিবাসী, আহমদিয়া এবং সুফি মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখনো বৈষম্যের অভিজ্ঞতা জানিয়ে যাচ্ছে।

ইউএসসিআইআরএফ এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোও ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনের পর থেকে হামলার অভিযোগ করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী গোষ্ঠী এবং বাঙালি মুসলিম বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ ঘটে, যাতে ধর্মীয় উপাসনালয় লক্ষ্যবস্তু হয় এবং অন্তত চারজন নিহত হন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়, আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। পরবর্তীকালে, একটি বৌদ্ধ ভিক্ষু সমিতি নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে তাদের বার্ষিক এক মাসব্যাপী ধর্মীয় উৎসব আয়োজন না করার ঘোষণা দেয়।
https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a7/

Hill Voice #international #humanrights #minority


হিল ভয়েস, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: গত ২১ জুলাই ২০২৫ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশ…..

(Feed generated with FetchRSS)

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *