বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান

Google Alert – ইউনূস

বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার গুরুত্ব একাধিকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ভারত। অবশ্য কেবল ভোট হলেই হবে না, সেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিকভাবে যে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, সেটাও বহুবার উচ্চারণ করেছে দিল্লি।

ভারতের এই অবস্থানে অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশে কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, সেটাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিবেচনা করবে না দিল্লি। সেক্ষেত্রে নির্বাচনও তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।

তবে বিভিন্ন বক্তব্য থেকে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার দেখতে চায় দিল্লি। কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনির্বাচিত হওয়ায়, তার সঙ্গে কোনও বোঝাপড়ায় যেতে আগ্রহী নয় ভারত।

অথচ বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক এবং  শিল্প ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ আকারে ভারতের যে বিপুল স্বার্থ তৈরি হয়েছে, সেটা রাতারাতি খরচের খাতায় ফেলে দেওয়াও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নয়।

গত মাসে ড. ইউনূস ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে, রোজার আগেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও সম্প্রতি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে বলেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে এবং আগামী ডিসেম্বরেই জানানো হবে তফসিল। ফলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, সব ঠিকঠাক থাকলে আর মাস পাঁচেকের ভেতরেই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতেই আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ড. শ্রীরাধা দত্ত এবং ঋষি গুপ্ত।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিত্ব। বাকি দুজন হচ্ছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় চিন্তক, যাদের গবেষণার মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যুও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আগামী বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এই আলোচনাসভায় সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা ও প্রসার ভারতী বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাহী জহর সরকার।

এই আলোচনাসভার প্রধান আয়োজকদের মধ্যে একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ড. ইউনূসের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ভারতের কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত, তা নিয়ে দিল্লিতেও মতপার্থক্য আছে।

যেমন অনেকে মনে করেন, কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে ভারতের একেবারে সংযত থাকা উচিত, যেন বাংলাদেশের ভেতরে ভারত বিরোধী মনোভাব আরও উসকানি না পায়।

আবার এক দল বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করার মতো একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ভারতের উচিত ড. ইউনূসের সরকারকে চাপের ওপর রাখা।

এছাড়া, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সরকারকে ভারত এতদিন যেভাবে সমর্থন করে এসেছে, তাদের থেকে কীভাবে ও কতোটা দূরত্ব বাড়ানো উচিত, তা নিয়েও ভারতের অন্দরমহলে আলোচনা আছে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতের মতো দলগুলোকে নিয়ে ভারতের অবস্থান নিয়েও অনেক প্রশ্ন ও তর্কবিতর্ক আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে দিল্লির এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভায় সে সব উত্তর খোঁজার চেষ্টায় একটা স্পষ্ট দিকনির্দেশনা মিলবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *