বাংলাদেশের মাধ্যমে দ. এশিয়ায় ‘বেনিফিশিয়ারি

Bangla News

মালয়েশিয়া আসিয়ান ও জনবহুল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাধ্যমে ‘বেনিফিশিয়ারি উইন্ডো’ যা সুবিধাভোগী জানালা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারনামাকে বলেছেন, মালয়েশিয়া ও আসিয়ানের জন্য ঢাকার গুরুত্ব অপরিসীম। শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও আশেপাশের এলাকায় জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি, যা একটি বিশাল লাভজনক কনজিউমার মার্কেট। একইসঙ্গে দেশের বিপুল মানবসম্পদ আঞ্চলিক উৎপাদনেরও বড় সুযোগ এনে দিতে পারে।


এ ছাড়া তিনি আঞ্চলিক গুরুত্বের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক বাণিজ্যে এক অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে স্থলবেষ্টিত ভুটান ও নেপাল এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর জন্য, যাদের সরাসরি সমুদ্রপথ নেই।  

অর্থনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রে সমুদ্র পথের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, ‘অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা বাংলাদেশে গড়ে তোলা যেতে পারে কারণ এখান থেকে সমুদ্রে পৌঁছানো সহজ। যেসব দেশের সরাসরি সমুদ্রপথ নেই, আমরা তাদের জন্য বিশ্বের সাথে সংযোগের পথ হয়ে উঠি। এর মানে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে এক বিস্তৃত দেশের নেটওয়ার্কের সাথে তার অর্থনীতি যুক্ত করতে পারে। ’

গত ১১-১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই নেতা মালয়েশিয়া–বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা, পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক স্বার্থের নানা বিষয়।  

নোবেল বিজয়ী ইউনূস এ ছাড়া প্রোটন হোল্ডিংস, সানওয়ে গ্রুপ, আজিয়াটা গ্রুপ বিডি এবং খাজানাহ ন্যাশনাল বিডিসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভূটান, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে সংযোগের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এমন সহযোগিতা মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে, যেখানে বাংলাদেশ পণ্য ও সেবার পরিবহনে সহায়তা করবে। আমরা এমন সহযোগিতা চাই যেখানে মালয়েশিয়া হবে ‘বেনিফিশিয়ারি উইন্ডো’ সুবিধাভোগী জানালা যা আমরা একেবারেই সেটাই খুঁজছি। ’

আসিয়ান অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বারনামাকে আরও বলেছেন, ‘আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে, পাশাপাশি আঞ্চলিক উৎপাদন সহায়তার জন্য প্রস্তুত বিপুল কর্মশক্তিও পাবে। এটা শুধু বাজার নয়—এটিই মানবসম্পদের উৎসও। যে কেউ এখানে (বাংলাদেশে) উৎপাদন করতে চাইলে দক্ষ শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা পর্যায় পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবে। ’

তিনি আরও বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে গভীর সমুদ্র, মৎস্য আহরণসহ অনেক অনাবিষ্কৃত আরও সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একই সমুদ্রসীমা ভাগ করে নিচ্ছে, যা যৌথভাবে কাজে লাগানো গেলে আরেকটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি সীমান্ত পারের বাণিজ্যকে ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল উভয়খাতে সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। আমাদের সামনে বিশাল বঙ্গোপসাগর রয়েছে, কিন্তু আমরা কখনো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা শুরু করিনি। যদি মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করি, তাহলে এটা হবে আরেকটি বড় অর্থনৈতিক সুযোগ। ’

তিনি প্রতিবেশীদের গুরুত্ব উল্লেখ করে আরও বলেছেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিবেশী অর্থনীতিগুলোকে বৃহত্তর সরবরাহ চেইনে যুক্ত করতে পারে। এর ফলে শুধু বাণিজ্য বাড়বে না, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি বিনিময় এবং সামুদ্রিক শিল্প ও ডিজিটাল পরিষেবার মতো উদীয়মান খাতে যৌথ উদ্যোগের সুযোগও তৈরি হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আসিয়ানের ‘ট্রিটি অব অ্যামিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন সাউথইস্ট এশিয়া’র (টিএসি) অংশীদার, যা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আসিয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আনুষ্ঠানিক কাঠামো।  

বারনামা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্রমোন্নতির কথা উল্লেখ করে লিখেছে, আসিয়ান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমোন্নতির পথে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, যা বিশ্বে সাধারণ মূল্যে ৩৫তম এবং ক্রয় স্বক্ষমতা অনুযায়ী ২৫তম অবস্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও রপ্তানি গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য, আর আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রস্তুত পণ্য। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত যা ডলার হিসাবে ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এএটি

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *