বাজারে আসছে বহুজাতিক ও রাষ্ট্র মালিকানাধীন

Bangla News

সরকারের মালিকানা রয়েছে এরূপ বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হলো।  তিনটি স্তরে পুরো বিষয় কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।  


সভায় সভাপতি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুদ্রা বাজারের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সভায় তুলে ধরেন। সরকারের উদ্যোগের ফলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মর্মে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।  


তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি কোম্পানিগুলোর সুশাসন ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বাড়বে। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর ভেলুয়েশন তথা বাজারমূল্যও জানা যাবে।  


পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য যেমন ইতিবাচক ফলাফল আনবে, তেমনি দেশের পুঁজিবাজারের জনাও সুফল বয়ে আনবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বলেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং এর উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে গত ১১ মে তারিখ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন বহুজাতি কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী বহুজাতিক কোম্পানীসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা জন্যই  সভার আয়োজন করা হয়।


সভায় শিল্প সচিব জানান যে, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা, উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দিক-নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক সভা আয়োজন করা হয়।  


সভায় সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারি মালিকানা রয়েছে সেগুলোতে সরকারি মালিকানার কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং বিদেশি মালিকানার কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে শিল্প সচিব সভায় অবহিত করেন।


পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান জানান যে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এবং দেশীয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর মার্কেট ভ্যালুসহ প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানা যাবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ট বৃদ্ধি ও সরকারের ট্যাক্স বাড়বে।  


তিনি আরও জানান যে, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১০ মোতাবেক কমিশন কোনো সিকিউরিটির প্রকৃতি এবং লেনদেন বিবেচনা করে জনস্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে পরামর্শ এবং ইস্যুকারীকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে স্টক এক্সচেঞ্জ-কে সিকিউরিটি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিতে পারে বলে তিনি সভায় অবহিত করেন।


তবে এক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি আলাদা আইন করা যেতে পারে মর্মে তিনি মতামত পেশ করলে সভায় উপস্থিত সবাই একমত পোষন করেন।


সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তারা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে মর্মে ওই বিভাগের প্রতিনিধিরা সভায় মতামত পেশ করেন।


সভায় সার্বিক পর্যালোচনা শেষে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:


(ক) বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে পুঁজিবাজারে তালিভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি ও আইসিবি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তাদের ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।  


(খ) দি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স,১৯৬৯ এর ধারা ১০ মোতাবেক আলোচ্য তালিকা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় ও প্রক্রিয়া সহজ করে কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সরাসরি তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা নেবে।  


এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের অন্য কোনো কোম্পানী তালিকাভুক্তির জন্য বিবেচিত হলে এ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি।  সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে।  


(গ) বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য একটি অর্ডিন্যান্স/আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিএসইসি। ওই অর্ডন্যান্স/আইনের খসড়া প্রস্তুত করবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি।  সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে।


এএটি

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *