Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের এক কমান্ডারসহ দু’জন নিহত হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিনটি এসএমজি, একটি চাইনিজ রাইফেল, ৪৫১ রাউন্ড বিভিন্ন অস্ত্রের গুলিসহ নানা সরঞ্জাম। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার পলি প্রাংশা এলাকায় নাইতং পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ে দুজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এ ছাড়া সেখান থেকে একজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকেও আটক করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত দু’জনের মধ্যে একজন লালমিন থাং বম। তিনি ৭ সদস্যের ওই গ্রুপটির কমান্ডার ছিলেন। তবে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিহতদের নাম ঠিকানা জানানো হয়নি। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী রুমা থানা পুলিশকে লাশ হস্তান্তর করেছে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান ও তল্লাশি চলমান রয়েছে। আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বিকেলে চট্টগ্রামের চব্বিশ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার জিওসি মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান রুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় রুমা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে পেজ খুলে ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ। বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি এবং হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের পর আলোচনার টেবিলেও বসে তারা। কিন্তু এর মধ্যেই বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় দু’টি ব্যাংকের তিনটি শাখায় সশস্ত্র হামলা করে টাকা ও অস্ত্র লুটের পর ফের আলোচনায় আসে এই সশস্ত্র সংগঠনটি। গত দুই বছরে এই সংগঠনটির সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ৬ সেনা সদস্যসহ অন্ততপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়। গ্রেফতার করা হয় কেএনএফের দেড় শতাধিক সদস্যকে।

আইএসপিআরের বক্তব্য : এ দিকে গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার আনুমানিক ভোর ৫টায় বান্দরবানের রুমা উপজেলার পলিপাংসা-মুলফিপাড়া এলাকায় কেএনএফের সশস্ত্র দলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কেএনএফ সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সেনা টহল দল ঘটনাস্থলে ইউনিফর্ম পরিহিত দুইজন সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যের লাশ উদ্ধার করে। নিহত দুইজনের মধ্যে একজনের নাম পুটিং/ডলি, যিনি কেএনএফের নেতৃত্ব পর্যায়ের মেজর পদবির সশস্ত্র সদস্য ছিলেন। নিহত আরেকজন কেএনএফের সশস্ত্র শাখার সদস্য ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি সাবমেশিনগান (এসএমজি), ১টি রাইফেল, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, অস্ত্রের ম্যাগাজিন, কেএনএফের ব্যবহৃত ইউনিফর্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

আইএসপিআর আরো জানায়, বিগত বছরগুলোতে কেএনএফের সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের জন্য বম জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেনাবাহিনীর অব্যাহত সফল অভিযানের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়; যার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ১২৬টি পরিবার তাদের নিজ নিজ পাড়ায় ফিরে এসেছে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে। সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা, আশ্রয় ও পুনর্বাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে।

অপর দিকে গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে কেএনএফের বিপুলসংখ্যক পোশাক উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পোশাক উদ্ধার হলেও এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি এ বিষয়ে। কেএনএফের পোশাক উদ্ধার সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। পোশাকের পেছনে মংহ্লাসিন মারমা ওরফে মং মারমা এখনো গ্রেফতার হয়নি। তাকে গ্রেফতারের পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *