বান্দরবানে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল সদর হাসপাতাল। তবে এখনো ৫০ শয্যার জনবল নিয়েই চলছে ১০০ শয্যার এই হাসপাতালের কার্যক্রম।

হাসপাতালের অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি থাকলেও লোকবলের সংকটের কারণে সঠিক সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও লোকবল না থাকায় প্রতিদিন শত শত রোগী সঠিক সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বান্দরবান সদর হাসপাতাল। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কাগজে-কলমে এখন এটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বাস্তবে চলছে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে। এমনকি ৫০ শয্যার নির্ধারিত লোকবলও পূর্ণ নয়। ফলে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কার্যক্রম অচল হয়ে আছে।

প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ রোগী বহির্বিভাগে ও ৯০-১০০ রোগী আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, আইসিইউসহ নানা সুবিধা থাকলেও টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞ না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। নার্সিং সুপারভাইজার, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্টাফ নার্স ও নার্স মিলে ৬৮ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪২ জন। বিভিন্ন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ৩৭ পদে কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ২০ পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১০ জন।

জেলার স্বাস্থ্যসেবা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলছে অভিযোগ করে স্থানীয়রা বলেন, পার্বত্য বান্দরবানের মানুষের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালই একমাত্র আশ্রয়। তাই এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও মানুষ সঠিক সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। রোগীদের বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। এতে গরিব মানুষের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে।

পৌরসভা ইসলামপুর এলাকা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “সদর হাসপাতালে যেভাবে দূরদূরান্ত উপজেলা থেকে রোগীরা সেবা নিতে আসে, সেভাবে ডাক্তার নেই। হাসপাতালে আল্ট্রা মেশিন আছে, কিন্তু পরিক্ষা করানোর মত ডাক্তার না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ আছে। হাসপাতালে আইসিইউ আছে, এটারও কার্যক্রম বন্ধ। দূরদূরান্ত উপজেলা থেকে রোগীরা জেলা সদর হাসপাতালে এসেও ভালো সেবা পাচ্ছে না।”

রুমা থেকে আসা রোগীর ভাই মেনপো ম্রো বলেন, “এখানে সব রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায় না। কয়েকটা টেস্ট ছাড়া বাকি সব বাইরে করতে হয়েছে। প্রেসক্রিপশনে দেওয়া সব ওষুধও হাসপাতাল থেকে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনে এনে চিকিৎসা নিতে হয়। আমাদের মত গরিব মানুষের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যায়।”

মহিমা আক্তার নামের এক শিশু রোগীর মা বলেন, “তার ২ বছর বয়সি ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। ডাক্তার চারটি টেস্ট দিয়েছে, সব টেস্ট বাইরে থেকে করতে হয়েছে। শুধু কয়েকটি ইনজেকশন হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে।”

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. দিলীপ চৌধুরী বলেন, “সদর হাসপাতালটা ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা করা হয়েছিল। এখনো ৫০ শয্যার জনবল নিয়েই ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালানো হচ্ছে। তাই চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কর্মচারীর একটা বড় সংকট রয়েছে।”

তিনি বলেন, “যদি ১০০ শয্যার লোকবল নিয়োগ দেওয়া হলে রোগীরা আরো অনেক বেশি উপকৃত হত। তারপরও অন্যান্য উপজেলা থেকে চিকিৎসকদের এটাচমেন্টের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি আরো বলেন, “মোটামুটি সবধরনের টেস্ট হাসপাতালে করানো হয়। মাঝেমধ্যে রোগীদের কয়েকটি বাইরে থেকে করানো লাগে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনসহ নানা যন্ত্রপাতি হাসপাতালে আছে। কিন্তু টেকনিশিয়ান না থাকায় সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।”

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *