বিচারের দাবিতে যুবদল নেতার লাশ নিয়ে মানববন্ধন স্বজন ও এলাকাবাসীর

Bangla Tribune

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন স্বজন ও গ্রামবাসী। শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে ওই ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের সড়কের ওপর লাশবাহী গাড়ি রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শত শত মানুষ। 

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে লাশবাহী গাড়ি রেখে আরেকটি মানববন্ধন করা হয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এই মানববন্ধনে তৌহিদুলের পরিবারের সদস্যরাসহ গ্রামবাসী অংশ নেন।

মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার স্বামীকে সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এরপর অমানবিক নির্যাতন করে স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই। আমার অবুঝ মেয়েগুলোকে যারা এতিম করেছে, তাদের বিচার চাই।’

বাবাকে হারিয়ে তৌহিদুলের বড় মেয়ে তাসফিয়া আক্তারের কান্না থামছেই না। তাসফিয়া বলেন, আমরা এখন কাকে বাবা বলে ডাকবো। আমার বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আমার ভালো বাবাটাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চার বোন এতিম হয়ে গেছি। আমরা বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।

মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, একজন ভালো মানুষকে তারা তুলে নিয়ে হত্যা করলো। আমরা বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

তৌহিদুলের সঙ্গে আটক করা হয়েছিল প্রতিবেশী লুৎফুর রহমানকে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মানববন্ধনে তিনি বলেন, তৌহিদুলকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, সে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি।

তৌহিদুলের ভাগ্নি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবা উদ্দিন বলেন, ‌‘ঘটনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দফায় দফায় আমরা কুমিল্লা সেনানিবাসের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ন্যায় বিচার চাই।’

মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সদস্যসচিব রাশেদুল হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা এ বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সেনাবাহিনী জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক রেখে দেশের জন্য কাজ করেছে। কিন্তু এখন এভাবে একজন নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু আমাদের কষ্ট দেয়। আশা করছি, নিহতের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।  

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তৌহিদুল ইসলামের ভাই সাদেকুর রহমান বলেন, ‘গত ২৬ জানুয়ারি আমার বাবা মারা যান। মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই দিনই চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে আসে আমার ভাই তৌহিদুল। শুক্রবার বাবার কুলখানি ছিল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আমরা বাড়িতে কুলখানির আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলাম। রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের বাড়িতে আসে। তাদের সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা কাউকে দেখিনি, তবে সাদাপোশাকে পাঁচ জন যুবক ছিল। বাড়িতে প্রবেশ করেই তারা তৌহিদুলকে আটক করে। এরপর আমাদের সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। তারা আমাদের ঘরে ব্যাপক তল্লাশি করে, তবে কিছু পায়নি। আমরা বারবার জিজ্ঞাসা করি, তৌহিদুলকে কেন আটক করছেন? কিন্তু তারা কোনও উত্তর দেয়নি। শুধু বলে, অস্ত্র কোথায়? একপর্যায়ে তারা আমার ভাইকে বাড়ি থেকে ধরে তাদের গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এরপর শুক্রবার সকালে আবারও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে এসে ব্যাপক তল্লাশি করে, তখনও কিছু পায়নি।’

সাদেকুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোরশেদ আলম আমাদের অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে কল করে জানান, তৌহিদুলের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা যেন দ্রুত কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসি। হাসপাতালে আসার পর দেখি, তৌহিদুল আর নেই। তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত এমনভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, যে কালো ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। আমার ভাইয়ের পেট, বুক, পিঠ, পা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে শুধুই নির্যাতনের চিহ্ন। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *