BD-JOURNAL
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ
উপসচিব পদে প্রশাসনের জন্য ৫০ ভাগ এবং সকল ক্যাডারের জন্য ৫০ ভাগ রাখার বিষয়টিকে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দেয়া সুপারিশকে ‘ভাগ-বাটোয়ারার’ সংস্করণ হিসেবেও দেখছে পরিষদ।
শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদ নেতারা তাদের অবস্থান তুলে ধরার পর সন্ধ্যায় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা পুর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাইনি, যেটুকু পেয়েছি সেখানে মূল সংস্কারের কোনো জায়গা নেই এখানে ভাগ-বাটোয়ারার একটা সংস্করণ হয়েছে। আগে ছিল ৭৫ ভাগ আর ২৫ ভাগ, সেটিকে করা হয়েছে ৫০ ভাগ, ৫০ ভাগ।’
তার আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যখন গঠিত হয়েছিল তখনই তারা আপত্তি করেছিলেন।
কমিশনকে পক্ষপাত দুষ্ট দাবি করে তিনি বলেন, ‘আট সদস্যের যে সংস্কার কমিটি হয়েছিল তার ছয়জনই একটি ক্যাডারের সদস্য। সামান্য একটু রিভাইসড হয়েছে, তার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
উপসচিব পদে পদন্নোতির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার থেকে এবং বাকি ৫০ অন্যান্য ক্যাডার থেকে নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মফিজুর রহমান বলেন, কেন সেটা মেধার ভিত্তিতে হবে না? যদি তারা মেধাবী হয় তাহলে পরীক্ষা দিতে সমস্যা কোথায়?
সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য কোটা রাখার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা (প্রশাসন ক্যাডার) পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠি কি না? পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠিদের জন্য ৫০ ভাগ কোটা রাখা যায় কি না? যদি তারা মেধাবী হয় তাহলে কোটা কেন চায়?
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি দুনিয়ায় চলছে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আর বাংলাদেশে চলছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সিস্টেম। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ যে সিস্টেম চলে আসছে সেখানে একটি জেলার প্রধান, একটি বিভাগের প্রধান আসবে জনপ্রতিনিধি থেকে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে আমরা দেখলাম, সরকারের একজন হবে জেলা ও বিভাগের প্রধান। তাহলে জনগণ ক্ষমতার সকল উৎস-এটা কোথায় থাকছে?
প্রতিবাদ জানিয়ে পরিষদের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বরেন, সংবিধান বিরোধী সকল টার্মস প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় আমরা এটা মানবো না।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সচিবালয়ে সুপিরিয়ার এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) করার প্রস্তাব দিয়েছে। এসইএসে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস্তবতার নিরিখে প্রশাসনিক সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বর্তমানে উপসচিব পদের ৭৫ শতাংশ ওই সার্ভিসের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখা আছে। সকল সার্ভিসের সমতা বজায় রাখার স্বার্থে এবং জনপ্রশাসনের উচ্চতর পদে মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন প্রশাসনিক সার্ভিসের ৭৫ শতাংশ কোটা হ্রাস করে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক মনে করছে।
অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আরেক সমন্বয়ক শওকত হোসেন মোল্লা বলেন, দেশের সকল সেক্টরের পরিকল্পনা প্রণয়ন বাস্তবায়নের কাজ উপসচিব থেকে তদুর্ধ্ব পদের কর্মকর্তারা করেন, যাকে ডিএস পুল বলে।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে এসইএস করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে একটি ক্যাডারে জন্য ৫০ ভাগ এবং সকল ক্যাডারে জন্য ৫০ ভাগ দেয়ার একটা বক্তব্য দেয়া হযেছে, এটা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। ১৯৭৯ এর ডিএস পুলের যে বিধি আছে সেই বিধি পরিপন্থি।
এর আগে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি