Google Alert – আর্মি
বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতি পরিবর্তনের পরিকল্পনার মধ্যেই দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন খনিজসমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশ সফর করেছেন। গত ১১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট তিনি ওই প্রদেশে সফর করেন। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ সফর কেবল সাধারণ কূটনৈতিক ভ্রমণ নয় বরং মিয়ানমোরের বিরল খনিজে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ও মিয়ানমার নীতি পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটের অংশ।
উত্তর মিয়ানমারের চীন সীমান্তঘেঁষা কাচিন রাজ্য বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ বিরল খনিজভাণ্ডার। ফাইটার জেট, ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত সামরিক সেন্সর, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার চিপ থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে এই খনিজ অপরিহার্য।
বর্তমানে এসব খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণের ৯০ শতাংশ দখল চীনের কাছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাচিনের চিপওয়ে–পাংওয়া বেল্টের খনিজ এতদিন চীনের প্রভাবাধীন ছিল, তবে ২০২৪ সাল থেকে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) একাধিক খনি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এসব বিরল খনিজে নিজেদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
মিয়ানমারের মার্কিন দূতাবাস বলছে, স্টিভেনসনের সফরে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বোঝা। সফরটি জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা পিছিয়ে যায়। মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাওয়াদ্দিকে জানিয়েছেন, মার্কিন চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এ সফরে সামরিক জান্তা বা কেআইএর কারও সঙ্গে দেখা করেননি। তবে বিশ্লেষকদের মতে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সফরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
রয়টার্সের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন কাচিনের খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেতে দুটি বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনা করছে। প্রথমটি সামরিক জান্তার সঙ্গে সমঝোতা করে কেআইএর সঙ্গে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন। দ্বিতীয়টি জান্তাকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি কেআইএর সঙ্গে চুক্তি করা।
যদিও ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র জান্তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যায়নি।
এছাড়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাচিন থেকে খনিজ ভারতে নিয়ে যাওয়ার রুট কার্যকর করার বিষয়ও মার্কিন প্রশাসনের পরিকল্পনায় রয়েছে। এজন্য ভারতকে আলোচনায় আনা এবং কোয়াড জোটের (যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান) সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আছে।
এর আগে মিয়ানমার জান্তাঘনিষ্ঠ কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বৈধতা পেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সামরিক জান্তা নিজেও।
এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডিসিআই গ্রুপকে বছরে ৩০ লাখ ডলারে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুদ্ধাপরাধ, দমন-পীড়ন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত জান্তা সরকার।
এ প্রেক্ষাপটে স্টিভেনসনের কাচিন সফরকে অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর কৌশলগত রূপরেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে নীতি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট এবং তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকের কাচিন সফর—দুই মিলে মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মানচিত্র ও আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তবে এ নীতি পরিবর্তনের বড় প্রভাব পড়তে পারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওপর। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক চাপের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র যদি মিয়ানমারকে কৌশলগত অংশীদারে পরিণত করে, সেই চাপ কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যাবে যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসের সম্ভাবনা বিলীন করে দিতে পরে।