বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের ৭৮ শতাংশই ধর্ম-পরিচয় লুকান, কিন্তু কেন? The Daily Star Bangla

Google Alert – সশস্ত্র

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি: এএফপি

“>
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি: এএফপি

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ফাইল ছবি: এএফপি

নতুন এক জরিপে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীদের তিন চতুর্থাংশই নিজের ধর্ম পরিচয় লুকিয়ে রাখেন।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি গণমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

জরিপের ফলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদি শিক্ষার্থীদের ৭৮ শতাংশ তাদের ধর্মীয় পরিচয় ও ৮১ শতাংশ তাদের জায়নবাদি পরিচয় লুকিয়ে রাখেন।

অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগ (এডিএল) ও দ্য ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অব জ্যুইশ স্টুডেন্টস (ডব্লিউইউজেএস) নামের দুই সংগঠন যৌথভাবে এই জরিপ পরিচালনা করে। এতে ৬০টিরও বেশি দেশের এক হাজার ৭২৭ জন্য শিক্ষার্থী অংশ নেন। ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষজুড়ে এই জরিপকাজ চলে।

কারণ কি?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস হামলা চালালে এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। সেদিনই গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা আজ অবধি অব্যাহত আছে। ইসরায়েলের প্রতিশোধের আগুনে বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি—যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।

প্রতিবেদন মতে, হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক পাল্টা জবাবের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষ মাত্রা ছাড়িয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেন এক ইহুদি শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

“>
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেন এক ইহুদি শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেন এক ইহুদি শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তারই প্রতিফলন পড়েছে এই জরিপে।

জরিপ প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইহুদি শিক্ষার্থীরা এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের এক অদ্ভুত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এসব কারণে তারা নিজ ধর্ম সম্পর্কে অন্যদের জানাতে চান না।

অন্যান্য জরিপেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

বি’নাই বি’রিথ ইন্টারন্যাশনাল ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অব জ্যুইশ স্টুডেন্টস নামে দুই সংগঠন সম্প্রতি একটি জরিপ চালিয়েছে। তাদের জরিপে জানা গেছে, ইউরোপের ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদিবিদ্বেষ ও ইসরায়েল-বিদ্বেষী বয়ানকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে এবং এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।

ইসরায়েল সরকারের নীতির কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি শিক্ষার্থীদের অনেকেই ফিলিস্তিনে নেতানিয়াহু সরকারের গণহত্যা সমর্থন করেন না। তা সত্ত্বেও, ইসরায়েল সরকারের অবলম্বন করার নীতির কারণে তারা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এডিএল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি ধর্মাবলম্বী কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর অন্তত একবার নিজে ইহুদিবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন অথবা নিজের চোখে ইহুদিবিদ্বেষের শিকার হতে দেখেছেন।  

ডব্লিউইউজেএস-এর প্রেসিডেন্ট জশ কোহেন বলেন, ‘জরিপের এই ফলে আমাদের উদ্বেগ ও হতাশা বেড়েছে, কিন্তু আমরা বিস্মিত হইনি।’

‘৭ অক্টোবরের পর বিশ্বজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা ও ইহুদিদের ক্যাম্পাসে একঘরে করে রাখার অভিযোগ বেড়েছে’,  যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভাবনীয় আচরণ করা হচ্ছে, যা এই জরিপে উঠে এসেছে।’

জরিপে মন্তব্য করা হয়, বিশ্বজুড়ে ইহুদি শিক্ষার্থীরা ভীত ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।

ইহুদি শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

“>
ইহুদি শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

ইহুদি শিক্ষার্থী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রতি ৩৩ শতাংশ জানান, তারা অন্তত একজন ইহুদি ধর্মাবলম্বীকে চেনেন, যাকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

২০ শতাংশ জানান তারা অন্তত একজন ইহুদিকে চেনেন যিনি মারধরের শিকার হয়েছেন।

অর্থোডক্স ইহুদি শিক্ষার্থীরা জানান, অন্যদের তুলনায় তারা দ্বিগুণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।  এ ছাড়া, ধর্ম-পরিচয় লুকানোর প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অনেক বেশি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

জরিপের ফল মতে, ২৯ শতাংশ ইহুদি শিক্ষার্থী সহপাঠীদের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। নয় শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হন।

জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষের মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। 

এডিএলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যারিনা রোজেনবার্গ বলেন, ‘জরিপে এক ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে। বিশ্বজুড়ে ইহুদি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে তাদের মৌলিক পরিচয় লুকাতে বাধ্য হচ্ছেন।’

‘যখন তিন চতুর্থাংশেরও বেশি ইহুদি শিক্ষার্থী মনে করেন যে নিরাপত্তার খাতিরে নিজের ধর্মীয় ও জায়নবাদি পরিচয় লুকিয়ে রাখা উচিৎ, তখন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে আমরা আশা করব, এসব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয়দের নজরে আসবে এবং তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *