বেতনের দাবিতে গার্মেন্টস ভাঙচুর, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ

চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

বেতন না পেয়ে কারখানা ভাঙচুর এবং পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়। শ্রমিকদের দাবি, দুমাসের বেতন পাচ্ছেন না তারা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধের ফলে মহাসড়কের কমপক্ষে ১৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।

ডেনিম প্রসেসিং প্ল‍্যান্ট, ডিপিপিএল নামের তৈরি পোশাক কারখানার পরিচালক আলমগীর হোসেন দাবি করেছেন ব‍্যাংকের অসহযোগিতার জন্য ২ মাস না, ১ মাসের বেতন বকেয়া হয়ে গেছে। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি। তবে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক বেতন বকেয়ার অভিযোগ তুলে পুরো কারখানায় তাণ্ডব চালায় এবং তার ওপর আক্রমণ করে। মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে, পরবর্তীতে ৪টি সেলাই দিতে হয়েছে।

হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি ।

কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদাও। তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। বেতন দেয়ার পর কারখানা খোলা হবে। আর এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জানান শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চান্দিনা উপজেলার পশ্চিম বেলাশহর এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন একদল শ্রমিক। ১১টার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ‍্যস্থতায় অবরোধ প্রত্যাহার করে মহাসড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা।

কারখানার পরিচালক, আহত মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন জানান, শ্রমিকরা গণমাধ্যমকে ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। তিনি বলেন, “পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল এবছরের জানুয়ারি মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংক থেকে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা না পাওয়ায় আমরা তাদের আংশিক বেতন দেই। শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন বকেয়া নেই। শুধু জানুয়ারির আংশিক বেতন বাকি। ওই বেতন আমরা বলেছি আগামী ৫ মার্চের ভেতর দিয়ে দেব। এই কথায় তারা রাজি হয় এবং আংশিক বেতন নিয়ে গতকাল চলেও যায়। কিন্তু আজ সকাল সাড়ে নয়টায় উচ্ছৃংখল কিছু কর্মচারীর প্ররোচনায় কয়েকজন শ্রমিক ও বহিরাগত কারখানায় ভাঙচুর শুরু করে।”

আলমগীর আরও জানান, এই সময় আশি ভাগ শ্রমিক কাজে ফিরতে চাইলেও একটি অংশ তাদের নিয়ে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করে। তাদের থামাতে চাইলে কতিপয় শ্রমিক তার উপর হামলা চালায়।

তিনি বলেন, “আমরা অন্য কারখানা মালিকদের মতো নই। আমরা পালিয়ে যাইনি। বরং শ্রমিকদের পাশে থেকে তাদেরকে আমাদের অবস্থা বোঝার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কোনো কিছুতেই কিছু মানেনি। উল্টো বাইরে থেকে ত্রিশ-চল্লিশজন বহিরাগত এনে কারখানার গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে। ভাংচুর চালায়। লুটপাট করে। আর আমার উপর হামলা চালায়। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা ধ্বংসের জন্য এটা একটা চক্রান্তের অংশ।”

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টে বেতন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। বকেয়া বেতনের জন্য তাদের মহাসড়ক অবরোধ করতে হয়েছে।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়। পরে শ্রমিকদের কথা শুনে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতনভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক থেকে সরে যান।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *