বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর ও লুটপাট এবং রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়িতে সংঘটিত সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ – হিল ভয়েস

হিল ভয়েস

হিল ভয়েস, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রাঙ্গামাটি: বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর ও লুটপাট এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘটিত সহিংস ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের পরামর্শ দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ।
আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ এর সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত পরামর্শ সহ ৫ দফা পরামর্শ জানানো হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নিম্নরূপ:

“২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি: একদল দুর্বৃত্ত সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে নিয়ে অতর্কিতে রাঙামাটি শহরে কাঠালতলীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মৈত্রী বিহার ও তবলছড়িস্থ আনন্দ বিহারে হামলা চালায়। মৈত্রী বিহারের গেইট ভেঙে বৌদ্ধ বিহারের ভেতরে প্রবেশ করে পবিত্র বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর, পবিত্র ত্রিপিটক গ্রন্থ ছিড়ে ফেলা, আসবাবপত্র, জানালার গ্লাস ও অন্যান্য সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে। বিহারের দানবক্স লুট করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দির আনন্দ বিহারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিহারের গ্লাস ভেঙে দেয় এবং পবিত্র বুদ্ধমূর্তিকে আঘাত করে। বাংলাদেশের মতো স্বাধীন, সার্বভৌম ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের প্রতি এ ধরনের চরম অবমাননার ঘটনায় পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ- এর পক্ষ থেকে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনে বড় অন্তরায় মনে করে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি। আমরা এসমস্ত সাম্প্রদায়িক মদদপুষ্ট দুর্বৃত্ত ও দুষ্কৃতিকারী আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি এরা অসম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ ও শান্তিপ্রিয় দেশ গড়ার বিনির্মাণে বড় অন্তরায়।

স্থানীয় জনগণ ও মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি: খাগড়াাছড়িতে জনৈক মোহাম্মদ মামুন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। ঐ ঘটনার প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি: তারিখে একদল লোক দীঘিনালা উপজেলায় লারমা স্কোয়ারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। জানা গেছে, উক্ত বিক্ষোভ মিছিল হতে দুর্বৃত্তদের হামলায় লেলিন চাকমা নামে এক ডাব বিক্রেতা গুরুতর জখম হন। একই দিনে খাগড়াছড়ি সদরেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেদিন রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে জুনান চাকমা (২০), ধন রঞ্জন চাকমা (৫০) ও রুবেল ত্রিপুরা (৩০) নামে তিন ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন আছেন। উল্লেখিত সহিংসতার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের জিমনেসিয়াম মাঠ হতে বনরূপা বাজারে গেলে উক্ত মিছিলের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে সেটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপান্তরিত হয়। দোকানপাট ও অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। সহিংস হামলায় এক আদিবাসী ছাত্র নিহত হয় । শিশু নারীসহ অনেক মানুষ আহত হয়।

বলা নিষ্প্রয়োজন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এটা প্রথম সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা নয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও নানাভাবে হামলাসহ বারবার এ ধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ঘটছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো বিচারহীনতা ও প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। এ যাবত পাহাড়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার কোনটারই সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে এমন কোন নজির নেই ।

এই প্রেক্ষিতে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা নিম্নোক্ত পরামর্শ দিচ্ছি-

১. রাঙামাটি বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর, লুটপাট এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

২. দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সংঘটিত সহিংস সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা;

৩. খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সংঘটিত সহিংস সাম্প্রদায়িক হামলা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারসমূহের আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতা করা। যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা;

৪. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধর্ম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রথাগত ঐতিহ্য ও অর্থনীতি সংরক্ষণে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন ও উদ্যোগ গ্রহণ করা;

৫. পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭-এর আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে গণতন্ত্রায়ন নিশ্চিত করা।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *