ভারতীয় ক্রীড়নক আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি: গণতন্ত্র ও মানবতাবিরোধী নেক্সাস

Google Alert – সেনাপ্রধান

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যতই নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে শুরু করেছে, পতিত স্বৈরাচারের দোসর ও পৃষ্ঠপোষকরা ষড়যন্ত্রের নতুন জাল বিস্তার করে চলেছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার মৃত্যু, অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব ও রক্ত ঝরিয়ে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরই একটি মহলকে প্রথমে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ধুয়া তুলে পুনর্বাসনের একটি প্রজেক্ট দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। ছাত্র-জনতার সচেতন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে তা বানচাল হয়ে যাওয়ার পর থেকে নতুন নতুন রূপে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুর্নবাসনের অপপ্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। আর এসব কর্মকা-ের কলকাঠি নাড়া হচ্ছে দিল্লি থেকে। জুলাই অভ্যুত্থানের আগের ১৬-১৭ বছর বাংলাদেশে প্রথম সেনাসমর্থিত ২ বছরের বিশেষ সরকারের ধারাবাহিকতায় পরপর চারটি পাতানো ও ভোটারবিহিন নির্বাচনের মূল কুশীলব ছিল দিল্লি। নির্বাচন কেমন হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে, পশ্চিমারা তার আদ্যোপান্ত জানলেও ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় ভারতকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে ধরে রাখার স্বার্থে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জনগণের প্রত্যাশা ও রক্তের মূল্যকে তারা বারবার অগ্রাহ্য করেছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ঐক্য ও শক্তির উপর আস্থা রেখে ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় সমন্বিত রাজনৈতিক কর্মকৌশল গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। সে ব্যর্থতার কারণেই কার্যত অপরিপক্ক ও অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের নেতৃতে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিকরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে সরকার পতনের একদফা দাবিতে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে লাখ লাখ মানুষের রাজপথে নেমে আসা এবং গণভবন দখলের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটে। ছাত্র-জনতার সে গণঅভ্যুত্থানে শেষ পর্যন্ত দেশের সেনাবাহিনীও রাজপথে নাগরিক সমাজের সহযোগি শক্তি হিসেবে শামিল হয়। হাসিনা পালানোর দুদিন আগে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর এক বিশেষ সম্মেলনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগের প্রস্তাবে সেনাবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের তরফ থেকে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হন বলে জানা গিয়েছিল। সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা, সিনিয়র ও জুনিয়র সেনাকর্মকর্তাদের মতামত মেনে নিয়ে আন্দোলনে সেনাবাহিনীকে জনগণের বিপক্ষে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে ১৫ বছরে দলীয় পরিচয় ও আনুগত্যের নিরিখে শেখ হাসিনার গড়া-পেটা ও অনুগত পুলিশ বাহিনী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঢাকার চারপাশের প্রবেশপথগুলোতে ছাত্র-জনতার উপর নির্মম-নির্দয়ভাবে লাখ লাখ বুলেট খরচ করেছে। পালিয়ে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা তার অনুগত পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা যেন দেশকে অচল, অকার্যকর করে দিয়ে তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনকে অনিবার্য করে তোলে। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোনো দেশে মাসের পর মাস ধরে পুরো পুলিশ বাহিনী অনুপস্থিত বা অকার্যকর থাকার ইতিহাস খুবই বিরল ঘটনা। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের পরও এমনটা ঘটেনি। হাজার হাজার জীবন ওরক্ত দিয়ে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও দেশের শিক্ষার্থীরা পালন করেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পর দেশের প্রধান জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা যখন জুলাই অভ্যুথানকে ‘কালো শক্তির’ কাজ কিংবা ‘ফকিন্নির পোলা’ বলে গালমন্দ করতে থাকেন, তখন দেশের মানুষের কাছে সেই দল সম্পর্কে ভুল মেসেজ যায়। হতে পারে এটাও পতিত স্বৈরাচারের সহযোগিদের ফাঁদ ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ।

প্রাক ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশোত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বালখিল্যতা, অনৈক্য, বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মঘাতী ও জাতিবিনাশি ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। নবাব সিরাজদৌলার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দুইশ বছরের পরাধীনতা ও গোলামির জিঞ্জির এ জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম ট্রাজিক ঘটনা থেকে কোনো রাজনৈতিক দল শিক্ষা গ্রহণ করেনি। দখলদার বেনিয়া শক্তি শাসক হয়ে প্রথমেই ডিভাইড, কনকোয়্যার অ্যান্ড রুল পলিসিতে হাজার বছরের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ভিত্তিগুলোকে অবিশ্বাস, বৈরীতা ও শত্রুতায় পরিনত করে তুলতে সক্ষম হয়। তা নাহলে অবিভক্ত বাংলার অর্ধেকের কম আয়তন ও দশভাগের একভাগ জনসংখ্যার গ্রেট ব্রিটেন কখনোই বাংলাসহ পুরোভারতীয় উপমহাদেশ দখল করে ২শ বছর ধরে শাসন-শোষণ করতে পারতো না। দেশভাগের সময় বাংলা ভাগের জন্য মূলত ভারতীয় ভ্রাহ্মণ্যবাদীরাই দায়ী। আজকের বাংলাদেশ আবারো প্রমান করে, আসাম, বিহারসহ সুবে আমলের অবিভক্ত বাংলা হতে পারতো এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র। এই মুহূর্তে ভারত, চীন, মিয়ানমারের মধ্যবর্তী ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানে বাংলাদেশ শক্তির অন্যতম ভরকেন্দ্র। একটি শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হলেও ভারতের কাছে তা কখনোই প্রত্যাশিত নয়। তারা সব সময়ই বাংলাদেশে ভারতের বশংবদ শাসক চায়, এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতের অন্যায্য আধিপত্য অকার্যকর হয়ে পড়বে। এই আশঙ্কায় ভারত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের বিরোধি। একাত্তুরে মুক্তিযুদ্ধের মূল স্পিরিট ছিল বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করা। সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে পাকিস্তানের জান্তা সরকারের হস্তক্ষেপ থাকলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের ক্ষমতার দাবিদার হতে পারতো না। কিন্তু লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বাধীনতাত্তোর প্রথম সরকারই ধ্বংস করে দেয়। তিহাত্তরে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাপক কারচুপি, ভোটডাকাতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে পরিনত করা হয়েছিল। খন্দকার মোশতাকের মত ডাকসাইটে আওয়ামী লীগ নেতাকে জিতিয়ে আনতে ব্যালটবাক্স ঢাকায় এনে ভোটের হিসাব পাল্টে দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধান স্থগিত করে বাকশাল কায়েম, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে দেশে পাকিস্তানি জান্তা সরকারের চেয়েও অনেক বেশি কঠোর একদলীয় দু:শাসন চাপিয়ে দেয়ার মূল পরিকল্পনা পরিচালিত হয়েছিল ভারতের ডিপস্টেট থেকে। শেখ মুজিবকে ট্রাজিক পরিনতির দিকে ঠেলে দিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের রক্ত ডিঙিয়ে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন সরকারে শপথ গ্রহণকারিরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। সে সরকারই দেশে প্রথম সামরিক আইন জারি করেছিল। ভারতও সে সরকারকে সমর্থন করেছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে একের পর এক সামরিক-রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবী তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সিপাহী, ছাত্র-জনতা তার গণতান্ত্রিক পথ নির্মাণের প্রয়াস অব্যাহত রাখে। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন ও নস্যাৎ করে স্বাধীনতার ঘোষক ও প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক-প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পথে অনেকটা সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু পুরো জাতিকে হতবিহ্বল ও শোকসন্তপ্ত করে দিলেও দেশের সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তার প্রভাব না পড়া ছিল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম সফলতা। রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি জাস্টিস আব্দুর সাত্তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই সাথে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দ্বিতীয় চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জিয়ার মৃত্যু দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করতে না পারলেও ভারতের অনুগত সেনাপ্রধান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখল দেশে ৮ বছরের সামরিক স্বৈরশাসনের জন্ম দেয়।

শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে এনে রাজনৈতিক পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। তাকে দেশে ফেরানোর ১৩ দিনের মাথায় জিয়ার মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা নাকি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন! জিয়া হত্যার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় হাসিনা নাকি বলেছিল ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’। শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে যে রাজনৈতিক পরিকল্পনায় এরশাদের সাথে সমঝোতা করেছিলেন তা সামরিক স্বৈরশাসন ৮ বছর টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সাজানো-পাতানো নির্বাচন বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও এরশাদ ও জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা বৈধতা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল। দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে যে কারণেই হোক, বেঁকে বসা এরশাদকে নির্বাচনে আনতে দিল্লি থেকে সুজাতা সিং ঢাকায় এসে যে রোল প্লে করেছিলেন, তা বাংলাদেশের একতরফা নির্বাচনে ভারতের ভূমিকার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভারতের বশংবদ রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি বার বার প্রমান দিয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ছিল, ভারতীয় বশংবদ স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে গণবিপ্লব। বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগিরা ভারতে পালিয়ে গেলেও দেশে স্বৈরতন্ত্রের প্রথম ও শেষ অণুঘটক জাতীয় পার্টির নেতারা বহাল তবিয়তে আছেন এবং পুরনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পুর্নবাসন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন! আওয়ামী লীগ পুর্নবাসনের কয়েক ধাপের এজেন্ডা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, জাতীয় পার্টিকে অবলম্বন করে তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।তবে ভিপি নূর ও গণঅধিকার নেতাদের উপর রক্তাক্ত হামলার পর জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হওয়ায় জাতীয় পার্টির কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। আশির দশকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে সামরিক স্বৈরশাসকের সাথে হাত মিলিয়ে এরশাদের শাসন দীর্ঘায়িত করার বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যেতে সমর্থনসহ সরকারে অংশীরিত্ব গ্রহণ এবং এক-এগারো পরবর্তী আওয়ামী ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রধান সহযোগি হয়ে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ নিয়েছিল এরশাদ-কাদেরের জাতীয় পার্টি। আওয়ামী সহযোগি ও ভারতীয় বশংবদ দল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রক্রিয়ার দিকে ছাত্র-জনতার দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের জাতীয় পাটি বিরোধী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ঘিরে অনেকটা বিনা উস্কানিতে গণঅধিকার পরিষদের নেতা ভিপি নূরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার নেপথ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের যে ভূমিকায় দেখা গেছে, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গত সপ্তাহে দিল্লিতে হাসিনার অন্যতম অলিগার্ক এস আলমসহ ভারতীয় গোয়েন্দাদের নিয়ে এক বিশেষ বৈঠকের খবর বেরিয়েছে। সেই বৈঠকে আগামি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা এবং এর মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই হস্তান্তরিত হয়েছে বলে জানা যায়। এরপর দেশে একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি তোলায় ভিপি নূরের উপর যৌথ বাহিনীর হামলা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এলাকাবাসির সংঘাত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ছাত্র সমন্বয়কদের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ৩১ আগস্ট সেনাপ্রধান প্রধান বিচারপতির সাথে সাক্ষাত করে আসার পরের দিন ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিয়েছে। ইসলামি ছাত্র শিবিরের জিএস প্রার্থী ফরহাদের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাম ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে রীট পিটিশন দায়েরের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেয়। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত ও দেশে নতুন অস্থিতিশীলতায় উত্তপ্ত হতে দেখে একে আওয়ামী লীগ, এস আলম গংদের বিগ বাজেট ও ভারতের ডিস্ট্যাবিলাইজেশন প্রকল্পের প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রথম দফায় দেশে স্বৈরশাসন ও গণতন্ত্র হত্যাকারী দল হিসেবে এবং দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগের ভুয়া নির্বাচন, গুম-খুন ও জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা হত্যার অন্যতম সমর্থক ও সহযোগি দল হিসেবে এসব অপরাধের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কর্মকান্ড অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ভারতের অসহযোগিতা ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ের সাথে জাতীয় পার্টির সম্পৃক্ততার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলা যায় না। জিএম কাদের দিল্লি ঘুরে আসার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল, সেখানে কি কি আলোচনা হলো, তিনি উত্তরে বলেছিলেন, দিল্লির অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। গত সোমবার একজন সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোষ্টে লিখেছেন, জাতীয় পার্টির অফিস কাকরাইলে না, নিউ দিল্লিতে। তিনি ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন কেন্দ্র জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবী এখন শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতাকর্মীদের নয়, দেশের গণতন্ত্রকামী, গুম-খুন, গণহত্যা, অর্থলোপাট ও দেশ ধ্বংসের অপশক্তির বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজেরও। গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে ৮ বছর ধরে এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালি সাহা, জেহাদ, রাউফুন বসুনিয়া, ডাক্তার শামসুল আলম মিলনসহ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছিল। সে সব হত্যাকান্ডের দায় জাতীয় পার্টি এড়াতে পারে না। জুলাই অভ্যুত্থানে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মকা-ে গণবিরোধি অবস্থানের কারণে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি ক্রমে জোরালো হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ চায় না। তারা এখানে বশংবদ, অর্থব শাসকদলকে ক্ষমতায় বসিয়ে লুটপাটতন্ত্র জারি রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ নির্বাসিত হওয়ার পরও জাতীয় পার্টি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা সত্যিই বিস্ময়কর। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদী প্রভাবমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া চলছে, ভারতীয় স্বার্থের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কুশীলবরা সেখানে আওয়ামী লীগের শূন্যতা পূরণে পুরনো বি-টিম জাতীয় পার্টিকে বেছে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি, আওয়ামী দোসর ১৪ দলীয় জোট ও চিহ্নিত বামপন্থীদের আওয়ামী বয়ান ও ভারতপ্রীতির রাজনীতির অবারিত সুযোগ এ দেশের গণতন্ত্রকামী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা আর দেবে না। রাজনৈতিক রিকনসিলিয়েশন চাইলে গণহত্যার বিচার, আত্মসমর্পণ, অনুশোচনা ও নতুন ধারার রাজনৈতিক চিন্তাধারার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশকে দেউলিয়া করে লুটে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকায় দেশে সংঘাত-সহিংসতা ও অস্থিতিশীল সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। এবার যারাই পতিত পলাতক ফ্যাসিস্টের পুর্নবাসনে ভিনদেশি শক্তির ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করবে, তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। সবাইকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

[email protected]

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You missed