‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় পাহাড়ে দখল, উচ্ছেদ, সংঘাত’ : সংবাদ অনলাইন

Google Alert – সামরিক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫

ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগামে ভূমি দখল, উচ্ছেদ এবং জাতিগত সংঘাত ঘটে চলেছে যার ফলে আদিবাসী জুস্মদের জীবন ও জীবিকায় ব্যাপক সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। তারা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৩০ বছর হতে চললেও সেখানে ভূমি সমস্যার সমাধান হয়নি। উল্টো সরকার বহিরাগতদের বসতি স্থাপন এবং জমি ইজারা দেয়া, বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা এবং জুস্ম গ্রামবাসীদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা সংগঘটিত হয়েছে । বিভিন্ন সরকার এলেও কেউই সমস্যার সমাধান করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত ভূমি কমিশনও কার্যকর নয়। এ অঞ্চলের সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সব পক্ষের সমর্থন প্রয়োজন।

গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১ বছর পাহাড়ের ভূমি সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ভূমি কমিশনকে সক্রিয়করণ’ শীর্ষক এ সভায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, ‘সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে এই প্রতারণামূলক প্রচারণা চালিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশে ১৯৭৯ সাল থেকে দেশের সমতল জেলাগুলো হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসে চার লক্ষাধিক বহিরাগত লোক এবং তাদের বসতি দেয়া হয় জুম্মদের ভোগ দখলীয় ও রেকর্ডীয় জমির ওপর। নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার মাধ্যমে জুম্মদেরকে উচ্ছেদ করে তাদের জমিগুলো বেদখল করে নেয়া হয় প্রচলিত আইন ও প্রথা লঙ্ঘন করে।

পাহাড়ে আদিবাসীদের জমি দখলের বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘রাবার প্লান্টেশন, বন বাগান, ফলবাগানসহ হর্টিকালচারের নামে পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় এমন ব্যক্তির নিকট আদিবাসী জুমচাষিদের প্রথাগত জুমভূমি, জুম্মদের রেকর্ডীয় ও ভোগদলীয় ভূমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেয়া হয়েছে। কেবলমাত্র বান্দরবান জেলায় ১৬০৫টি রাবার প্লট ও হর্টিকালচার প্লট-এর বিপরীতে প্লটপ্রতি পঁচিশ একর করে ৪০,০৭৭ একর জমি ইজারা দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন ও সম্প্রসারণ এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের নামে হাজার হাজার একর জমি পদ্ধতি বহির্ভূতভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছে কিংবা অধিগ্রহণের উদ্যেগে নেয়া হয়েছে। কেবলমাত্র বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় এ ধরনের সামরিক উদ্দেশে ৭১,৮৭৭.৪৫ একর অধিগ্রহণ বা বেদখল করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে শত শত একর জায়গা-জমি অধিগ্রহণ ও জবরদখল করা হচ্ছে। এছাড়া জুম্মদের আইনের অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে, জালিয়াতির মাধ্যমে, দাদনের ফাঁদে ফেলে, সামরিক ও ভূমি প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে, বান্দরবানে কথিত ‘আর’ কবুলিয়তের মাধ্যমে ইত্যাদি নানা অসৎ উপায়ে জুম্মদের জায়গা-জমি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।’

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে একটি জলন্ত অগ্নিকুণ্ড’ আখ্যায়িত করে জাকির হোসেন বলেন, ‘ভূমি হারানোর ফলে হাজার হাজার পার্বত্য অধিবাসী, বিশেষ করে জুম্ম অধিবাসী নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়েছে এবং তাদের চিরায়ত জুম ভূমি হারিয়ে তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। জুম্মদের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলার অনেক স্থায়ী বাঙালি অধিবাসীও তাদের স্ব স্ব জায়গা-জমি হারিয়েছে এবং ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়েছে।’

অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘এই গণ-অভ্যুত্থানের মূল স্লোগান ছিল বৈষম্য দূর করা। ভূমি অধিকার, শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্যসহ সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের শপথ নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু সরকার পাহাড়ের সমস্যার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। সারাদেশে গণতন্ত্রের লড়াই করবে কিন্তু পাহাড়কে বাইরে রেখে সে লড়াই হবে না।’

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি সমস্যার সমাধান ছাড়া ওই অঞ্চলে জনগণের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সুতরাং সমাধান করতে গেলে ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রিন্স আরও বলেন, ভুল রাজনৈতিক কারণে আমাদের দেশকে অস্থীতিশীল করার জন্যে ওই অঞ্চলজুড়ে যাতে কোনো আধিপত্যবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অপতৎপরতা চালাতে না পারে তার জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে পাহাড়ের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।’

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও সরকার যোক্তিক কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। তাই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত কোনো সরকারের আমলে পাহাড়ের কত ভূমি দখল করা হয়েছিল, অবৈধভাবে লিজ দেয়া হয়েছিল, সেসব প্রকাশ করা । কত সেটলার, কোন সংখ্যায় সেখানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটাও প্রকাশ করা হোক।’

‘গণঅভ্যুত্থানের পরও পাহাড় বিষয়ে শাসকশ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি’ এমন দাবি করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয় নেই। আগামী ছয় মাসেও তা হবে বলে মনে হয় না। সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা। এখানকার মানুষ বেশি কিছু চায় না। নাগরিক হিসেবে, রাজা-প্রজার সম্পর্কের বাইরে এসে নাগরিক মর্যাদা চেয়েছে। সরকারগুলো যদি এটা বিবেচনায় না নেয়, তাহলে এগোনো যাবে না। জাতীয় সংলাপের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।’

সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যার সমাধানের দ্রুত ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করা ও কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা; ভূমি কমিশনের পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ বরাদ্দ করাসহ ৩ দফা দাবি ও ৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- গণ ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এস. এম সবুর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন স্বপন ও আদিবাসী অধিকার কর্মী মেইনখেন প্রমীলা প্রমুখ।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *