ভোটের সম্ভাব্য সময়ের ঘোষণা আসছে কবে?

Google Alert – ইউনূস

রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে; কবে আসছে সেই ঘোষণা- সেদিকেই এখন সবার নজর।


গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে নেওয়া উদ্যোগ গুছিয়ে এনেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ভোটের সম্ভাব্য সময়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন।


আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৃহস্পতিবার বলেছেন, “অপেক্ষা করেন, কিছু দিনের মধ্যে ঘোষণা শুনবেন।”


একইদিন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


“প্রধান উপদেষ্টা প্রথমে বলেছিলেন নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। পরবর্তী সময়ে লন্ডনে বলা হয়েছে যদি অনেকগুলো সংস্কার হয় এবং বিচারের কাজগুলো এগিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে…সনদ বা ঘোষণাপত্র যাই হোক না কেন, যেভাবেই সনদ গ্রহণ করা হোক না কেন- নির্বাচন তার সময়মতো হয়ে যাবে।”


মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষে আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও তফসিলের দাবি জানিয়ে আসছে।


এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি শেষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারপ্রধানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করার পর সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ফুল গিয়ারে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।


সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যও চূড়ান্ত করছে। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতিমূলক কাজ বেশ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে এবং দৃশ্যমান হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সরকারের তৎপরতা রয়েছে। সামনে পাঁচ মাস রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক সংস্কার হয়েছে, ইসি আমলেও নিচ্ছে। নির্বাচনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করাও জরুরি।


“গণমাধ্যমে জেনেছি, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব একটা আভাসও দিয়েছেন। এখন ভোটের পথে সম্ভাব্য ‘নির্বাচনের সম্ভাব্য সপ্তাহ’ এমন ঘোষণা সরকারের তরফ থেকে প্রত্যাশা সবার।”


নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলছেন, ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ গুছানো ও প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত; বাকি আইন-বিধি-নীতিমালা জারি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে সব কাজ শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে।

ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমার দিকে তাকিয়ে আছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটিও। সরকার ভোটের সম্ভাব্য সময় জানালে নির্বাচনের তারিখের ৫০-৫৬ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এতে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় ও ভোটের তারিখ থাকবে।

ভোটের প্রস্তুতিতে এসেছে গতি


গত ২৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন। এরপর আইন, বিধি ও নীতিমালা জারি, হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ, সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক নির্বাচনি প্রস্তুতিতে গতি আসে।


গত ১ জুলাই সিইসি নাসির বলেছিলেন, ভোটের প্রস্তুতি এখন ফুল গিয়ারে চলছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল- এই সময় ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যথাসময়ে নির্বাচনের তারিখ এবং শিডিউল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।


>> ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ হবে ১০ অগাস্ট


>> সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে, ১০ অগাস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তির সময় দেওয়া হয়েছে


>> দল নিবন্ধনের যাচাই-বাছাই চলছে, প্রবাসীদের ভোটের জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি অনুমোদন


>> নীতিমালা জারির পর স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন আবেদন করা যাবে ১০ অগাস্টের মধ্যে


>> বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালা জারি


>> আচরণবিধি প্রস্তুত; ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নীতিমালা জারি ও সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংস্কারে তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে।


>> নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা সেপ্টেম্বরে শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


>> জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে এবং সনদ প্রস্তুতের প্রক্রিয়া চলছে।


>> সম্ভাব্য সময়সীমা পেলে যথাসময়ে ভোটের বিস্তারিত সময়সূচি বা তফসিল ঘোষণা করবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।


>> প্রস্তুতিমূলক রুটিন কাজ চলছে এখন।


ইসি কর্মকর্তারা জানান, মূল নির্বাচনি আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) প্রয়োজনীয় সংশোধনী গুছিয়ে রাখা হয়েছে। দ্রুত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ভেটিং, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন লাগবে। সরকারের সায় পেলে সংশোধন অধ্যাদেশ হবে।


এরপর সব বিধি সংযোজন, পরিমার্জন, ম্যানুয়াল, নির্দেশিকাসহ সব ধরনের সামগ্রী মুদ্রণে যাবে।


৯ জুলাই ও ২৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন।


>> নির্বাচন প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সমন্বিত কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।


>> ভোটকে সামনে রেখে প্রশাসনে রদবদলের পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।


>> নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা শিগগির ঘোষণা দেওয়ার আভাস এসেছে।


>> ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতির নির্দেশনা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।


সরকারের দিকে তাকিয়ে ইসি


নির্বাচনের প্রস্তুতি ‘পুরোদমে’ চলছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।

তিনি বলেন, “(নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা) প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর থেকে বার্তা আসবে। আপনারা যা জানেন, ওটা আমরাও জানি সংবাদপত্র থেকে।

“স্পেশালি আমাদের কাছে কোনো বার্তা নেই। এটা ঘোষণা দিলে তখন ইনশাল্লাহ দেখা যাবে।”

তিনি জানান, সরকারের তরফে ভোটের সম্ভাব্য সময় আসবে, আর ভোটের তারিখ নির্বাচন কমিশনই দেবে।

ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী উনারা একটা সম্ভাব্য তারিখ দেবেন। নির্বাচন কোন তারিখে হবে, কখন নমিনেশন পেপার জমা দিবে, কখন যাচাই বাছাই হবে-এগুলো নির্বাচন কমিশনই একটা দিবে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।”

আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকার কবে ভোটের সম্ভাব্য সময়ের বিষয়ে ঘোষণা দেবে, সে সম্পর্কে ইসির কাছে কোনো তথ্য নেই।

আরপিও ছাড়া সব কাজ গোছানো

আইনবিধি সংস্কারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাদে সবগুলো হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “আরপিও-টাও আমরা কাছাকাছি নিয়ে গেছি। এখন ঐকমত্য কমিশনের কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, আমরা অপেক্ষা করছি। মোটামুটি আমরা একটা দাঁড় করিয়েছি। শিগগির এটাও আসবে বলে আমি ধারণা করছি।”

চার-পাঁচ মাসের মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি হবে বলে জানান ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ।

তিনি বলেন, “প্রস্তুত থাকতেই হবে; যেহেতু (নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থা) বাস্তবায়নকারী সংস্থা; প্রস্তুত আমাদের থাকতেই হবে।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে তফসিল ঘোষণার কাছাকাছি সময়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আব্দুর রহমানেল মাছউদ।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এটা তো শুধু নির্বাচনের জন্য না; সকলের জন্য, দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য, সবকিছুর জন্য- আইনশৃঙ্খলা উন্নত হওয়া দরকার। আমরা যতদূর অনুমান করে বলতে পারি, সিডিউল ঘোষণা বা কাছাকাছি সময়ে আমরা উনাদের সাথে হয়তো বসব।”

ইসির করণীয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয় এবং কীভাবে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করা যায়- এসব বিষয় ওই বৈঠকে উঠবে বলে জানান তিনি।

প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। দাবি-আপত্তি আসবে, শুনানি করে ফাইনাল করা হবে। আইনশৃঙ্খলা তো স্বাভাবিক একটা দায়িত্ব।

“আরপিও সংশোধন করে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পদ্ধতি কীভাবে করা যায়- একটা প্রস্তুত করা হয়েছে। তারপরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে কি না, কীভাবে রোধ করা যায় তা বিবেচনা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে যেভাবে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে সব প্রস্তুতি হয়ে যাবে। আর তফসিল দেওয়া হবে ভোটের তারিখ থেকে অন্তত দেড়-দুমাস আগে।

আরও পড়ুন-

সংসদ নির্বাচন: প্রথম থেকে দ্বাদশ

কিছু দিনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা শুনবেন: আইন উপদেষ্টা

ফুল গিয়ারে ভোটের প্রস্তুতি চলছে: সিইসি

ভোট সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলার ‘সমন্বয়ে জোর’ প্রধান উপদেষ্টার

ভোটের প্রস্তুতির আর ৫ মাস, নির্বিঘ্ন পরিবেশ কি হবে?

‘সব কিছু মিলিয়ে যৌক্তিক সময়ের ভেতরেই তফসিল’

প্রস্তুতি শেষ হলে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে: ইউনূস-তারেক বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *