মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা : বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন

Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা

দেশের মাদরাসা, মাদরাসা কমিটি ও মাদরাসমূহ পরিচালনার দফতর হতে হবে দলীয় রাজনীতি মুক্ত। সালাফী ও লা’মাজহাবী মতাদর্শের পাঠ্যবই আলেম ওলামাগণ বর্জন করবেন। গত বৃহস্পতিবার জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় দফতরে অনুষ্ঠিত এক সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। মাদরাসার নীতি নির্ধারণী দফতরসহ সব কমিটি ও উপ-কমিটি একটি নির্দিষ্ট দলের দখলে রয়েছে, এতে দ্বীনি শিক্ষা চর্চার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সংগঠনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার ধারাবাহিকতা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিষ্ঠানসমূহ অরাজনৈতিক হতে হবে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, বিএমটিটিআইÑ এমনকি মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সিংহভাগই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী। দল করার অধিকার সবারই আছে কিন্তু যখন কেউ নিজ দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, তখন আর বিষয়টি স্বাভাবিক থাকে না। নীতি-নির্ধারণী দফতরের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, জনগণের প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় পূর্ববর্তীগণের ন্যায় আপনারাও ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।

জমিয়াত সভাপতি বলেন, সালাফী, ওয়াহাবী ও লা’মাজহাবী মতাদর্শের ব্যাপারে দেশের আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখদের অবস্থান স্পষ্ট। ঈমান আক্বিদার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখাতে যাবেন না। পাঠ্যবই সংশোধনের নামে এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গাকে দুর্বল করার যে চক্রান্ত চলছে, তা কখনোই বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না।

সংগঠনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, দেশের মাদরাসাসমূহের বিধি-বিধান নির্ধারণকারী দফতরসমূহ রাজনীতিমুক্ত করা সময়ের দাবি। বর্তমানে এসব দফতরে শিক্ষাবান্ধব কাজের থেকে নিজ দলীয় কাজকে অধিক প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নিয়োগ ও বিভিন্ন কমিটি উপ-কমিটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রেও নিজ দলীয় কর্মীদের অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে যোগ্য ব্যক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এর প্রভাবেই মাদরাসার গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাদের মতাদর্শের ব্যক্তিরা প্রাধান্য পাচ্ছে। দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ধীরে ধীরে ঐতিহ্য, বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা হারাচ্ছে। অনতিবিলম্বে দেশের মাদরাসা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের চিহ্নিত রাজনৈতিক অ্যাজেন্ড বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে মাদরাসার গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটিও রাজনীতি মুক্ত রেখে যথাযথ দ্বীনি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

মহাসচিব আরো বলেন, বই সংশোধনের নামে দেশের মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করার যে নীলনকশা অঙ্কিত হয়েছে তা সর্বমহলে সমালোচিত হয়ে বর্জন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও ভুল সংশোধনের নামে মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে ওয়াহাবী ও লা’মাজহাবী মতবাদ সন্নিবেশিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আকাইদ ও ফিকহ বইতে সুন্নি ও হানাফি মতাদর্শের বিষয়সমূহ সুকৌশলে বাদ দিয়ে সালাফী ও ভ্রান্ত আক্বিদার মতাদর্শ দ্বারা পরিমার্জন করার যে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তা কখনোই বাস্তবতার মুখ দেখবে না। এহেন স্পর্শকাতর, ঈমান বিনষ্টকারী বিষয় পাঠ্যবইয়ে প্রবেশ করিয়ে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টার সাথে যে বা যারা জড়িত আছে তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যাহার করতে হবে। নেতৃবৃন্দ দ্বীনি শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখতে ও দেশের স্থীতিশীলতা অক্ষুণœœ রাখতে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেনÑ প্রিন্সিপাল ড. সৈয়দ মাওলানা শরাফত আলী (পিরোজপুর), প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান (চাঁদপুর), প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক (ঢাকা), প্রিন্সিপাল আ খ ম আবুবকর সিদ্দিক (ঢাকা), প্রিন্সিপাল মাওলানা হাদিউজ্জামান (রংপুর), প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমীন আফসারী (পিরোজপুর), প্রিন্সিপাল মাওলানা মোবাশ্বিরুল হক নাঈম (ভোলা), প্রিন্সিপাল মাওলানা নুমান হোসেন (সিলেট), প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা এজহারুল হক (ঢাকা), প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু জাফর মো. ছাদেক হাসান (ঢাকা), মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান (ঢাকা), প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক (বারিশাল), প্রিন্সিপাল মাওলানা আতিকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ), প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক (দিনাজপুর), প্রিন্সিপাল মাওলানা আনসার উল্লাহ (পাবনা), প্রিন্সিপাল মাওলানা ওজায়েরুল ইসরাম (সাতক্ষীরা), প্রিন্সিপাল মাওলানা শাহদাত হোসেন (কক্সবাজার), প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু রাফে মো. ফেরদাউস (মাদারীপুর), প্রিন্সিপাল মাওলানা শহিদুল হক (ঝালকাঠি), প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু ছালেহ (চট্টগ্রাম), প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ (নারায়ণগঞ্জ)। এছাড়াও দেশের প্রায় সব জেলা সভাপতি ও সেক্রেটারিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *