মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন

Bangla Tribune

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নতুন এক উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে নির্ধারিত কিছু অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর ইউক্রেনীয় সরকার সতর্ক করে বলেছে, এতে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আরও উৎসাহিত হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র আনা কেলি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পর্যালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ইউক্রেনে নির্দিষ্ট  কিছু অস্ত্র সরবরাহ স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেকোনও ধরনের দেরি বা দ্বিধা রাশিয়াকে শান্তির পথ না বেছে যুদ্ধ ও সন্ত্রাস চালিয়ে যেতে আরও উৎসাহিত করবে।

ইউক্রেন আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। কারণ প্রায় প্রতি রাতেই রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।

মার্কিন স্থগিতাদেশের বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার কিয়েভে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিককে ডেকে পাঠিয়েছে ইউক্রেন।

তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনও তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক নোটিশ পায়নি। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, যুদ্ধ শেষ করার পথ হলো আগ্রাসনকারী রাষ্ট্রের ওপর একযোগে ও ধারাবাহিক চাপ বজায় রাখা।

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা স্থগিতের খবরে ক্রেমলিন সন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনে কম অস্ত্র গেলেই যুদ্ধ শেষ হবে আরও দ্রুত।

তবে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ফেদির ভেনিস্লাভস্কি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো যখন রাশিয়া ইউক্রেনে সন্ত্রাসী হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাশিয়ার সাম্প্রতিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বিমান  হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে কিয়েভ।

এনবিসি জানিয়েছে, স্থগিত হওয়া অস্ত্রের মধ্যে থাকতে পারে প্যাট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টর, হাউইটজার কামানের গোলা, ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্রেনেড লঞ্চার।

পেন্টাগনের এক সূত্র সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, মার্কিন অস্ত্র মজুদ অত্যন্ত কমে গেছে। তাই এমন সিদ্ধান্ত। যদিও আনা কেলি জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি নিয়ে কারও সন্দেহ থাকা উচিত না। ইরানকে জিজ্ঞেস করলেই তা বোঝা যাবে।

উল্লেখ্য, মার্চে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বৈঠকের পর সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করেছিল। পরবর্তীতে তা আবার চালু করা হয়।

এপ্রিলের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে মার্কিন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রকে খনিজ সম্পদ ব্যবহারের অধিকার দেয়।

এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো তিন বছরেরও বেশি সময়ে ইউক্রেনকে বিপুল সামরিক সহায়তা দিয়েছে। তবুও অনেকেই বলছেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া যুদ্ধ চালানো কঠিন হবে।

চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল বিবিসি রুশ বিভাগকে বলেছেন, আমি ভবিষ্যতে গোলাবারুদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারছি না। কারণ সামনের নির্বাচনের পর নতুন সরকারের অগ্রাধিকার কী হবে তা বলা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই ঘণ্টার বেশি সময় ফোনে কথা বলেছেন। ২০২২ সালের পর এটাই তাদের প্রথম ফোনালাপ। ম্যাক্রোঁ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পুতিন দাবি করেছেন, রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ পশ্চিম বহু বছর ধরে উপেক্ষা করেছে, এটাই যুদ্ধের মূল কারণ।

বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ রয়েছে যা ২০১৪ সালে দখল করেছিল মস্কো।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *