Google Alert – সেনাপ্রধান
১৯৫৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল আইয়ুব খান। নিজেকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ উপাধিতে ভূষিত করে তিনি যেমন দেশের গণতন্ত্রকে খর্ব করেন, তেমনি দ্রুতই হয়ে ওঠেন ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসনের সঙ্গে তার দৃষ্টিনন্দন ছবি আজও বিভিন্ন সংরক্ষণাগারে রয়েছে।
এই দৃশ্য শুধু ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যের নয়- এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত ‘বন্ধুত্ব’-এর প্রতীক, যার মূলে ছিল পারস্পরিক প্রয়োজন। পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব চেয়েছিল আন্তর্জাতিক বৈধতা ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জন্য প্রশ্রয়; আর যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল এমন এক মিত্র, যে তার নির্দেশে নতজানু থাকতে পারে- প্রয়োজনে গণতন্ত্রকে পদদলিত করবে। পাকিস্তানে এমন দৃষ্টান্ত একাধিক।
আশির দশকে জেনারেল জিয়া উল হক ছিলেন আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার ফ্রন্টলাইন পার্টনার। ২০০০-এর দশকে জেনারেল পারভেজ মুশাররফ হন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের মুখপাত্র। ৯/১১-এর পর আমেরিকার আফগান আগ্রাসনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে পাকিস্তান, এবং সেই ভূমিকায় নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান জেনারেল
পারভেজ মুশাররফ।
সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো জেনারেল আসিম মুনির। ২০২৪ সালে তিনি ফিল্ড মার্শাল উপাধি পান এবং অভ্যুত্থান ছাড়াই হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজনের দাওয়াত পান-পাকিস্তানের ইতিহাসে এ ঘটনা নজিরবিহীন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রকাশ্যে বলেন, “তাকে দেখে আমি সম্মানিত বোধ করছি।” এই বার্তায় পরিষ্কার- যেখানে পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে আমেরিকার চোখে সত্যিকারের ক্ষমতাবান হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি বন্দুকের নল ধরেন।
বর্তমানে পাকিস্তানের সংসদ, সরকার ও বিচারব্যবস্থা থাকলেও বাস্তব ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে। তারা নির্ধারণ করে কে শাসক হবেন, কে কারাগারে যাবেন, এমনকি বিচারপতির পদও কাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু এই দখলদারিত্ব সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে নিচে।
মোটকথা! যুক্তরাষ্ট্র সবসময় পাকিস্তানে এমন সেনাপ্রধানকেই পছন্দ করে, যিনি ক্ষমতাশীল হবেন, সাহসী হবেন, যিনি জনগণের নয়, বরং আমেরিকার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। এশিয়ায় বিভিন্ন ফ্রন্টে আমেরিকার স্বার্থ হাসিলে সহযোগিতা করবে। এবং আমেরিকার স্বার্থে প্রয়োজন হলে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।