মার্কিন যুদ্ধবিমান এবং ইরান : ভারত মহাসাগরে কী ঘটতে চলেছে?

Kalbela News | RSS Feed

পরমাণু চুক্তি নিয়ে মার্কিন ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরের ব্রিটিশ দ্বীপ ডিয়েগো গার্সিয়াতে ৪টি ‘স্টিলথ বি-টু স্পিরিট’ বোমারু বিমান পাঠিয়েছে।

এই পদক্ষেপটি ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যম এপি এ তথ্য জানায় এবং পাশাপাশি ২৯ মার্চ সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একই তথ্য পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমান মার্কিন অস্ত্রাগারের অত্যন্ত শক্তিশালী ও উন্নত বিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই বিমানটি প্রচলিত এবং পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম এবং এটি বিশেষভাবে প্রতিপক্ষের দেশের গভীরে প্রবেশ করে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর স্টিলথ প্রযুক্তির কারণে এটি প্রচলিত শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় সহজে ধরা পড়ে না, যা বিমানের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।

ডিয়েগো গার্সিয়াতে মোতায়েন করা বিমানগুলোর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান বা তার সমর্থক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারে, কারণ এই বিমানগুলো প্রায় দুই হাজার মাইল দূরে থেকে ইরানকে আঘাত করতে সক্ষম। আর এটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার না করেও বিমানগুলো ব্যবহার করা যায়, ফলে তা ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী বা অন্যান্য আক্রমণের আওতার বাইরেও থাকতে পারে।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও খামেনির প্রতিক্রিয়া

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে উদ্দেশ্য করে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইরানকে তার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বাতিল করতে হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির পর ইরানের নেতারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, মার্কিন চাপের কাছে তারা মাথা নত করবে না।

এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমান ইরানের দোরগোড়ায় মোতায়েন করা হয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও তীব্র করে তুলছে।

ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন

সম্প্রতি, ডিয়েগো গার্সিয়াতে ৩টি যুদ্ধবিমান দেখা গেছে এবং কান পাবলিক ব্রডকাস্টার উল্লেখ করেছে, এগুলো ইরানে আঘাত করার জন্য প্রস্তুত। বিমানগুলো এমন এক স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে, যেখানে থেকে তাদের মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের সামরিক ঘাঁটি ছাড়াই ব্যবহার করা সম্ভব। এটি বিমানগুলোকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়ক হতে পারে।

বিশ্ব মিডিয়ার রিপোর্ট ও ইরানের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটি নিউজ জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এই দ্বীপে বি-টু বোম্বার ও সি-সেভেনটিন কার্গো বিমান মোতায়েন করেছে এবং বিমানগুলোর জ্বালানি জোগান দিতে ১৮টি রিফুয়েলিং ট্যাংকারও পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, ইরানও মার্কিন এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেন, যখন সময় ঘনিয়ে আসবে, তখন কোনো পার্থক্য করা হবে না- কোনো মার্কিন, ব্রিটিশ বা তুর্কি ঘাঁটি ব্যবহার করুক, ইরানে হামলার জন্য যে ঘাঁটি ব্যবহার হবে, সেটি লক্ষ্য করেই পাল্টা হামলা হবে।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্য পদক্ষেপ

তারও আগে বাইডেন প্রশাসন গত বছর ইয়েমেনের হুতিদের বিরুদ্ধে কনভেনশনাল বোমাসহ বি-টু বিমান ব্যবহার করেছিল। বর্তমানে, বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান ব্যবহার করে লোহিত সাগর থেকে হুতিদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে।

আরও উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইউএসএস কার্ল ভিনসন নামক একটি বিমানবাহী রণতরী মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে।

মার্কিন যুদ্ধবিমান ডিয়েগো গার্সিয়াতে মোতায়েন এবং ইরানকে লক্ষ্য করে সামরিক প্রস্তুতির এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন বিপর্যয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এটি শুধু ইরানকে নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থির করে তুলবে এবং এই সংকটের ভবিষ্যৎ পরিণতি পুরো বিশ্বকে উদ্বিগ্ন রাখবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *