Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা
সম্পর্ক ‘গভীরতর’ করার লক্ষ্য নিয়ে তিন দিনের সফরে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালা লামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তার এই সফরে অভিবাসন ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে; সহযোগিতা এগিয়ে নিতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ২টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
সফরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে, সেখানে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
মঙ্গলবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উভয় দেশের প্রতিনিধি দল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবে। বৈঠকের পর দুদেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রহমান রোববার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতে নতুন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ, অধিক সংখ্যক পেশাধারীদের নিয়োগ, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এ সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি বিষয়ক সহযোগিতা, ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠন (এফবিসিসিআই ও এনসিসিআইএম), বিএমসিসিআই ও মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান এমআইএমওএসের মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (আইএসআইএস) মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত মোট পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া দু’দেশের মধ্যে হালাল ইকোসিস্টেম, উচ্চশিক্ষা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক মোট তিনটি ‘নোট বিনিময়ের’ সম্ভাবনা রয়েছে।
দুই দেশের সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন থাকবে।
মঙ্গলবার বিকালে একটি ব্যবসায় ফোরামে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন।
সফরের তৃতীয় দিনে বুধবার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার (ইউকেএম) আচার্য এবং নেগেরি সেমবিলান রাজা তুয়াংকু মুহরিয ইবনি আলমারহুম তুয়াংকু মুনাওয়ির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি তুলে দেবে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে একটি স্মারক বক্তৃতাও দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরকালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, জ্বালানি সহযোগিতা, হালাল অর্থনীতি, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, কৃষি, শিক্ষা ও জন-যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এ সফরে বাংলাদেশের আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার এবং রেজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে (আরসিইপি) যোগদানের আবেদন জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে অধিকতর সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্যও আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ।
মুখপাত্র বলেন, “মালয়েশিয়ার সাথে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুনসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা এই সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আছেন।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশিদের নিয়োগে সিন্ডিকেটের প্রভাব বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে রোববারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “মালয়েশিয়ান অফিসিয়ালদের সাথে প্রায় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
“প্রথম প্রশ্নটা যেটা বললেন, সেটা অনেকটা স্ট্রাকচারাল ইস্যু। অনেক বিষয় এখানে ইনভলভ। তো, সেটা নিয়ে আমরা কিন্তু অনেক সিরিয়াসলি, এটা ড. আসিফ নজরুল প্রথম থেকে এটা নিয়ে লেগে আছেন এবং এটা নিয়ে আমরা আশা করছি সামনে আরও একটা বেটার জায়গায় যাবে।”
জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার ও তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুদেশের পুলিশ প্রধান এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
“এর পরে এখন যে তথ্যগুলো আসছে, সেগুলো যাতে যাচাইবাছাই করা যায়, দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা হচ্ছে এবং এটা আমরা নিবিড়ভাবে দুইটা দেশ সহযোগিতা করছি।”
মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশিদের বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, “অনেক আলাপ আলোচনাইতো হবে। কিছুতো চুক্তি হবে, তার বাইরেও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
“এবং প্রধান উপদেষ্টার সাথে তাদের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার বাইরেও আমাদের প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আছেন, উনি কথা বলবেন। এখন দেখি কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা এসে আপনাদেরকে আপডেট জানাব।”
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমই প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। তার আমন্ত্রণে এবার মুহাম্মদ ইউনূস কুয়ালা লামপুরে গেলেন।