মিয়ানমারকে চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাম্প?

Samakal | Rss Feed


মিয়ানমারকে চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাম্প?

মতামত

ডেভিড ব্রেনার

2025-07-31

গত শুক্রবার মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মিত্রদের ওপর থেকে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কয়েক দশক ধরে চলে আসা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণকালে বাইডেন প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ ছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন এবং বর্বর সামরিক সরকারের হাতে নিরলস বোমাবর্ষণ ও দমনপীড়ন সহ্য করা একটি দেশের সঙ্গে সংহতির নিদর্শন।

এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ‘মিয়ানমারের ওপর ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধ’-এর সর্বশেষ পর্ব। আর তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনকে আরেকটি কৌশলগত বিজয় এনে দিয়েছে। নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই পদক্ষেপ দুঃখজনক হলেও আশ্চর্যজনক নয়। ট্রাম্প ইতোমধ্যে রাশিয়ার মুখে তুলে দিয়ে ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করেছেন, গাজার জাতিগত নির্মূলের পক্ষে কথা বলেছেন এবং আমেরিকান গণতন্ত্রের অবশেষকে সক্রিয়ভাবে ধ্বংস করছেন। কিন্তু এটি কেবল নৈতিক ব্যর্থতা নয়; সর্বোচ্চ স্তরের একটি কৌশলগত ভুল।

নীতি পরিবর্তনের নেপথ্যে কী যুক্তি রয়েছে তা এখনও অস্পষ্ট। মার্কিন সরকারও কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে সময়টি কৌতূহলোদ্দীপক। মাত্র কয়েকদিন আগে কংগ্রেস তিনটি দ্বিদলীয় বিল পাস করেছে, যেখানে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আর জান্তার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জান্তা নেতা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংও বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনাকালে উদারভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেছিলেন। সম্ভবত এটি ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি ব্যক্তিগত তোষামোদ ও আত্মকেন্দ্রিকতা দ্বারা পরিচালিত হওয়ার আরেক উদাহরণ। তবে এই পদক্ষেপের পেছনের উদ্দেশ্যগুলো আরও পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। ব্যবসায়িক লবিস্টরা ট্রাম্পকে বোঝাতে চেয়েছেন, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পর্যন্ত সবকিছুর জন্য অত্যাবশ্যক মিয়ানমারের বিরল মাটির ধাতুগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ হতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর একটি প্রধান বৈশ্বিক সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত, বিশেষত যখন চীন তার নিজস্ব পরিবেশগত ধ্বংসাত্মক খনি কার্যক্রম কমিয়ে এনে শূন্যস্থান পূরণের জন্য মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এখানেই সমস্যা। মিয়ানমারের বিরল মাটির খনিগুলো জান্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। এগুলো চীনা সীমান্ত বরাবর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর  (ইএওএসের কর্তৃত্বাধীন)। বিশ্বের প্রাচীনতম বিদ্রোহী আন্দোলনগুলোর মধ্যে একটি হলো কাচিন ইনডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশন (কেআইও)। তারা গত বছর বিশ্বের বৃহত্তম ভারী বিরল মাটির খনিগুলো দখল করে।

ইতোমধ্যে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অ-রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ) নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিরল মাটির খনি ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। বার্মার কমিউনিস্ট পার্টির অবশিষ্টাংশ থেকে উদ্ভূত এই গোষ্ঠী এখনও সশস্ত্র ও বেইজিং সমর্থিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের বিরল মাটির খাতে অর্থপূর্ণ অবস্থান অর্জন করতে পারে– এই ধারণা কেবল নির্বোধ নয়; অর্থহীন। আরও খারাপ হলো এটি সরাসরি চীনের হাতে খেলার ঝুঁকিতে পরিণত করে।

বেইজিং ইতোমধ্যে মিয়ানমারের ওপর বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। চলতি বছরের শুরুতে ইউএসএআইডির নৃশংস কাটছাঁট মিয়ানমারের রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য চীনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে এখন এই আধিপত্য আরও সুদৃঢ় হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মিয়ানমারের জেনারেলরা এ পরিবর্তনকে স্বাগত জানাবেন। তারা তাদের পরিকল্পিত ভুয়া নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এবং দেশ-বিদেশে তাদের প্রচারণা জোরদার করতে এটি ব্যবহার করবেন। কিন্তু তারা চীনকে ত্যাগ করবে না, যা তাদের অস্ত্র, তহবিল ও কূটনৈতিক আবরণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস।

এদিকে দেশটির প্রতিরোধ আন্দোলন, যা মিয়ানমারের অর্ধেকেরও বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, উপেক্ষার শিকার হলো। বার্মা অ্যাক্টের অধীনে প্রাণঘাতী নয় এমন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণভাবে পশ্চিমা সমর্থন মূলত প্রতীকী; সামান্য নিষেধাজ্ঞা, মানবিক ত্রাণ ও সহানুভূতির শব্দবন্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর বর্তমানে সেই প্রতীকী সমর্থনও ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বছরের পর বছর কেবল বুলি আওড়ানোর পর মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পশ্চিমাদের ওপর আস্থা রাখার খুব কমই কারণ রয়েছে। কিন্তু এই সর্বশেষ বিশ্বাসঘাতকতা তাদের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করতে পারে। তবে এটি রাতারাতি ঘটবে না।

ড. ডেভিড ব্রেনার: সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক; এশিয়া টাইমস থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

© Samakal

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *