Google Alert – আর্মি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মিয়ানমারের বিরল খনিজ সম্পদের উৎস থেকে চীনকে দূরে সরিয়ে রাখতে নীতিগত পরিবর্তনের চিন্তা করছে। এই লক্ষ্যে দেশটির সেনা সরকার এবং জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে থাকা হেভি রেয়ার আর্থস আমদানির প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন সেনা সরকার ও কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ)-র মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করতে পারে। আবার কেউ কেউ সেনা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই কেআইএ-র সঙ্গে সরাসরি চুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন।
হেভি রেয়ার আর্থস হলো এমন কিছু খনিজ, যা উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র ও যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজে খুব অল্প পরিমাণ হেভি রেয়ার আর্থস উৎপাদন করে। ফলে দেশটি এগুলো আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে এই খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণের ৯০ শতাংশই চীনে হয় বলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে।
মিয়ানমারের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দেওয়ার পরও কাচিন অঞ্চলের খনিজ আহরণ নিয়ে ওয়াশিংটনে নীতিগত আলোচনার খবর উঠে এসেছে।
গত ১৭ জুলাই ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এই খনিজ খাত নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারে মার্কিন চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে দেশটিতে একটি নিরাপত্তা কোম্পানির পরিচালনায় থাকা অ্যাডাম ক্যাসটিলো।
ক্যাসটিলো বলেছেন, কাচিনের জাতিগত বিদ্রোহীরা চীনের দ্বারা শোষণের শিকার হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও কেআইএ-র মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে একটি চুক্তি করাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে। এতে চীনের প্রভাব কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব খনিজ চেইন গড়ে তুলতে পারবে।
এদিকে, অং সান সু চির সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা শন টারনেলও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বিরোধীদলের প্রতি সমর্থন বজায় রেখে কেআইএ-র মাধ্যমে খনিজ আহরণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিনির্ধারকেরা এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আলোচনাগুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে এবং বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম। তবে আলোচনাগুলো মার্কিন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রস্তাবের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৭৯ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের খনিজ অঞ্চল কাচিন এখন কেআইএ-এর নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা সম্প্রতি কাচিনের চিপওয়ে-পাংওয়া খনিজ অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তবে খনিজগুলো সরিয়ে ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, তা এখনও অনুপস্থিত।
বিশ্লেষক বারটিল লিন্টনার বলেন, মিয়ানমারের চীনা সীমান্তবর্তী খনিজ অঞ্চল থেকে ভারতে খনিজ সরানো কঠিন হবে। একটি মাত্র রাস্তা আছে, আর চীন নিশ্চয়ই বাধা দেবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সম্প্রতি এক চিঠিতে ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি আলোচক দল পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পও এক চিঠিতে তাকে নতুন শুল্ক আরোপের বিষয়ে জানিয়েছেন।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও এটি মিয়ানমার নীতিতে কোনও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়।