মিয়ানমারে বেড়েছে বিদ্রোহীদের ওপর সরকারি বাহিনীর আক্রমণ

Google Alert – আর্মি

সা¤প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে বিদ্রোহী গ্রæপগুলোর ওপর আক্রমণ জোরদার করেছে সরকারি বাহিনী। এতে করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো পড়েছে বেকায়দায়। অর্থ, খাদ্য ও অস্ত্র সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছে তারা। দল ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে আরাকান রাজ্য নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির শত শত সদস্য। এমন তথ্য জানা গেছে, বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণকারী আরাকান আর্মির এক সদস্যের কাছ থেকে।

বিজিবি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বিজিবির ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধীন উখিয়া বালুখালী বিওপির ৫ নম্বর পোস্টে আরাকান আর্মির এক সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। তার নাম জীবন তঞ্চংগ্যা (২১)। তার কাছ থেকে একে-৪৭ রাইফেল, ৫২টি গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জীবন জানিয়েছেন, তার বাড়ি (বাংলাদেশে) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গর্জবুনিয়া গ্রামে। বাবার নাম চিংমং তঞ্চংগ্যা। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে মিয়ানমারের মংডুতে আরাকান আর্মির ক্যাম্প থেকে তিনি পালিয়ে এসেছেন। তার মত আরো শত শত বাংলাদেশি উপজাতীয় যুবক আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়েছেন। আরো অন্তত ৩০০ আরাকান আর্মির সদস্য ক্যাম্প থেকে পালিয়েছেন।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, আরকান আর্মি থেকে পালিয়ে যাওয়া সদস্যরা গোপনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। এমনকি তারা উখিয়া টেকনাফ কক্সবাজার এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে গিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। তারা সেখান থেকে আরকান আর্মির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খাদ্য ও যুদ্ধ সরঞ্জাম জোগাড় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, স¤প্রতি তিনি চিনেন এমন কয়েকজন আরাকান আর্মির সদস্যকে কক্সবাজার থেকে গাড়িতে ঢাকায় যেতে দেখেছেন। তাদের কথোপকথনে তিনি তাদের বন্ধুদের যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার কয়েকটি বৌদ্ধমন্দীরে একত্রিত হওয়ার কথা শুনেছেন।

বিজিবির ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারী আরাকান আর্মির সদস্য জীবনকে এবং তার কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র উখিয়া থানায় দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জীবন দাবি করেছেন, নিরাপত্তা শঙ্কা ছাড়াও যে মোটিভেশন দিয়ে তাকে নেওয়া হয়েছে, সেখানে সে এবং তারমত অনেকেই ধাক্কা খেয়েছেন। এটা সংঘাতময় পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত এবং আরো কঠিন হতে পারে।’

সীমান্ত পরিস্থিতির ব্যাপার ওয়াকিফহাল এমন একাধিক সূত্র জানান, গত বছর ডিসেম্বরে মংডু, বুচিডং, রাচিডং টাউনশিপসহ রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দেয় আরাকান আর্মি। এর পর পুরো এলাকা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে তারা। অধিকৃত অঞ্চলকে স্বাধীন ‘আরাকান রাষ্ট্র’ ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। ইতোমধ্যে চীনের সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী। জান্তা বাহিনীর হামলাসহ নানা সঙ্কটে আরাকানকে এখনও স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করতে পারেনি আরাকান আর্মি। উপরন্তু রাখাইনের সহিংস পরিস্থিতির মুখে গত এক বছরে এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ১৩ লাখের বেশি।

সীমান্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স¤প্রতি রাখাইনে ফের হামলা জোরদার করেছে মিয়ানমার সরকার। দফায় দফায় আরাকান আর্মি লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে বিমান হামলা। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্যা ইরাবতীর খবর অনুযায়ী, গত ২ মে থেকে এ পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর হামলায় আরাকান আর্মির অন্তত ৮৬ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। সেখানে দেখা দিয়েছে, অর্থ, খাদ্য, ওষুধ, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের মারাত্মক সঙ্কট।

বিশেষঞ্জ মহলের মতে, এসব প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ গড়ে তোলার জন্য এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের একটি করিডোর সৃষ্টির বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কথা চলছিল। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শক্ত অবস্থান এবং দেশপ্রেমিক সংবাদপত্রের লেখালেখির কারণে সরকার সেটি করতে পারেনি।

রাখাইনে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরাকান আর্মীর সদস্যদের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়াও রয়েছে অর্থ ও খাদ্য অস্ত্র সঙ্কট। জানা গেছে, এ সুযোগে আরাকানের মুক্তিকামী রোহিঙ্গা গ্রæপগুলোর সঙ্গে জান্তা সরকারের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। একসময় তাদের শত্রæমনে করে নির্যাতন করলেও আরকান আর্মিকে কোনঠাসা করতে এখন তাদেরকে কাজে লাগাতে চায় মিয়ানমার সরকার।

স¤প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ির ওপারে সীমান্তে গোলাগুলির এবং গোলযোগ তারই ফল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং মংডুর বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অনেক স্থানে আরাকান আর্মি এভাবে প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মংডুর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে নিজস্ব পানিসীমায় জান্তা বাহিনী নৌশক্তি বাড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, জান্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণের আশঙ্কায় আরাকান আর্মি উত্তর মংডু এলাকায় টহল ও গেট নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার করেছে। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আরাকান আর্মির অনেক সদস্য দল ছাড়ছেন। অর্থ সঙ্কটের কারণে মাদকসহ সীমান্তে চোরাচালানের ওপর ভর করে আছে আরাকান আর্মি। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাচার করতে মাথাপিছু বড় অঙ্কের টাকাও তারা নিয়ে থাকে। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পুঁজি করে বাণিজ্য করছে আরাকান আর্মি। অনেক রোহিঙ্গাকে জড়িয়ে মাদকের রমরমা কারবারও করছে তারা। তবে স¤প্রতি বিজিবির শক্ত অবস্থানে এতেও ধাক্কা খাচ্ছে তারা। এতে করে আরাকান আর্মির সদস্যরা উপয়ান্তর না দেখে দল ছেড়ে পালাচ্ছে। আত্মসমর্পণকারী আরাকান আর্মির সদস্য জীবন পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির কারণে তিনি অস্ত্রসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। এছাড়াও আরাকান আর্মি তাদেরকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল তা উবেগেছে।

কক্সবাজার বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম জানান, গত রোববার রাতে সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে শূন্যরেখা থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৩০ মিটার ভেতরে মিয়ানমার অংশে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়া সফরে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর জন্য মিয়ানমারে ‘শান্তি মিশন’ পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ এখন সর্ব মহলে প্রশংসা পাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার এই উদ্যোগে সাঁড়া দেবেন। আর এতে করে আরাকান আর্মির মত সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো আরাকানে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবেনা।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *