মৃত্যুকূপ হয়ে উঠছে মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনা

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫, ৮:৫৮ পিএম

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝরনাগুলো হয়ে উঠছে এক একটা মৃত্যুকূপ। এখানে গত পাঁচ বছরে বেড়াতে এসে ঝরনার কূপে পড়ে ১২ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। সবশেষ গত ১৫ জুন রুপসী ঝরনায় এক কলেজ ছাত্রের প্রাণহানি ঘটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্র্যটকদের অতি উৎসাহী মনোভাব এবং সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে বন বিভাগের যথাযথ নজরদারি এবং ঝরনাগুলোর ইজারাদারের গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে পাহাড়। এই পাহাড়কে ঘিরে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা সারা বিশে^ ছড়িয়ে রয়েছে। পাহাড়ে সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে ঝরনা; যা বর্ষাকালে আপন যৌবনে ভরপুর হয়ে অতুলনীয় সুন্দরী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে। ঝরনার কলকল-ছলছল শব্দে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ঝরনার প্রেমে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাহাড়ি ঝরনাগুলোতে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। আর এই ঝরনাগুলো রয়েছে চট্টগ্রামের উত্তর বন বিভাগে। এখানে রয়েছে, খৈয়াছড়া ঝরনা, রুপসী ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা, সহস্্র ধারা ঝরনাসহ মোট ১৩টি ঝরনা । বর্ষা ও ঈদ মৌসুমে পর্যটকদের ঢল নামে এই ঝরনাগুলোতে। আর একটু অসাবধানতার কারণে আনন্দ মুহূর্তেই যেন বিষাদে পরিণত হয়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় গাইড, বন বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের কারণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানের খৈইয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, বাওয়াছড়া ও রূপসী ঝরনাগুলো। প্রতিনিয়ত এসব ঝরনাগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ঘুরতে এসে ঝর্ণা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ছবি তোলা, বর্ষার সময় পিচ্ছিল পথ বেয়ে ওপরে ওঠা, সাঁতার না জানা সত্ত্বেও পানিতে নামা, গভীরতা না জেনে পাহাড়ের ওপর থেকে ঝরনা কূপে লাফ দেওয়ায় পর্যটকরা একের পর এক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে ইজারাদার পর্যটক প্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা আদায় করলেও দুর্ঘটনা রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এ বিষয়ে এ আর এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা এস এম হারুন বলেন, বন বিভাগের নির্দেশনা না থাকায় বড় ধরনের উন্নয়ন কর্মকা- করা সম্ভব নয়। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। 

মিরসরাই ফারার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। দূর্ঘটনার খবর পেলে ফায়ার সার্ভিস সর্বদা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে। পর্র্যটকদের অতিউৎসাহী মনোভাব এবং সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। সব শেষ এখানে ১২ জন পর্যটক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক। তবে হতাহতদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।’

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের উত্তরে থাকা পাহাড়ী ঝরনাগুলো পর্যটকদের জন্য এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্গম ও পিচ্ছিল পথ হওয়ায় এবং সতর্কতা অবলম্বন না করায় পর্যটকরা হতাহত হচ্ছেন। আমরা ইজারাদার এবং স্থানীয় প্রসাশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তায় আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

আজকালের খবর/বিএস 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *