মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন গ্রেফতার যে কারণে

Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে মেজর সাদিককে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে তদন্ত আদালত। কিন্তু তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে গত ৬ আগস্ট ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করায় বিভিন্ন মহলে কথা উঠেছে যে, জাফরিনের দোষ কোথায়? তাকে কেন গ্রেফতার করা হলো? আবার অনেক সাধারণ মানুষও জাফরিনের গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন।

তবে সুমাইয়া জাফরিন যে গভীর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত তা হয়তো কেউ জানেন-ই না। গোয়েন্দা পুলিশের নিবিড় অনুসন্ধানে জাফরিনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার নতুন পরিকল্পনায় মগ্ন ছিলেন। সেই পরিকল্পনার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একজন সামরিক কর্মকর্তাকে। তার নাম মেজর সাদিক। মেজর সাদিক শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি চেইনের অংশ। তার স্ত্রী, ভাই- এমনকি তার ভায়রা ভাইরাও জড়িত ছিলেন এই পরিকল্পনায়।

পুলিশের ভাষ্যমতে, মেজর সাদিক সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে ৭৪ বিএমএ লং কোর্সের মাধ্যমে। ধাপে ধাপে মেজর পদে উন্নীত হন ২০২৩ সালে। কিন্তু তার সামরিক জীবনের চেয়েও আলোচনায় এসেছে তার রাজনৈতিক সংযোগ। তার শ্বশুড় অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হারুন ছিলেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি। তিনি এক সময়ে শেখ হাসিনার প্রিয় পাত্র ছিলেন। একসময় গণ ভবনে গিয়ে হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করতেন। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তার মেয়ে সুমাইয়া জাফরিন ছিলেন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। এমন পরিবারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর সাদিক যেন পেয়ে যান রাজনৈতিক সেনাপতির স্বীকৃতি।

সাদিক ও সুমাইয়া জাফরিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল শেখ হাসিনা, জয় এবং শেখ রেহানার সঙ্গেও। এমনকি শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পরও জয়ের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ ছিল সুমাইয়া দম্পতির। তদন্ত উঠে এসেছে এমন তথ্য।

মার্চ থেকে জুলাই মাত্র ৫ মাস। এই সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে একাধিক গেরিলা ট্রেনিং সেল। বিশেষ করে বসুন্ধরা কেবি কনভেনশন সেন্টারে গত ৮ জুলাই একটি ভয়ংকর গেরিলা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলে। সেখানে আওয়ামী লীগের ২০০ থেকে ২৫০ নেতাকর্মী অংশ নেন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় অনলাইনে গুজব ছড়ানো, রাজনৈতিক অপপ্রচারের কৌশল, সশস্ত্র প্রতিরোধ গঠনের মৌলিক শিক্ষা, কোড নাম্বার ব্যবহার করে যোগাযোগ, সিগনাল অ্যাপে ওডিপি নামের গ্রুপ। এই গ্রুপে যোগ দেওয়া প্রত্যেক সদস্য পেতেন একটি কোড নাম্বার। কারও নাম রাখা হতো না। পরিচয় চলতো কোড নাম্বার দিয়ে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল দুই হাজারের বেশি সদস্যের গোপন নেটওয়ার্ক।

জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শরিফ হাসান অনু, ইয়ামিন, মোহন এই নামগুলো এখন তদন্ত সংস্থার নজরে। এদের কারও বাসা উত্তরায়, কারও গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে, আবার কারও রাজশাহীতে। এদের মাধ্যমে সাদিক ও সুমাইয়া ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিরোধ পরিকল্পনা। তাদের ভাষায় আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেবল দুই দলই থাকবে। কিন্তু আমাদের থাকতে হবে প্রস্তুত। নেত্রী ফেরার আগেই মাঠ গরম রাখতে হবে। এই কথাগুলোর নেপথ্যে ছিল কুৎসিত রাজনৈতিক বিশ্বাস। ক্ষমতা হারালেও প্রস্তুতি চলবে। অস্ত্র, মানুষ, টাকা সব যোগাড় হবে। বাইরে থেকে দেখলে তারা সাধারণ ব্যবসায়ী রাজনৈতিক কর্মী কিংবা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক। কিন্তু এদের হাত ধরেই ঘটতে চলেছিল সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা। একটি বিকল্প রাজনৈতিক যুদ্ধের প্রস্তুতি।

শম্পা নামের এক নারী ও সোহেল নামে এক ভদ্রলোক- দুজনই উত্তরার বাসিন্দা। শম্পার স্বামী সরকারি কর্মকর্তা আর সোহেলের বাবা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা। তারা দুজন মিলে সেদিন কনভেনশন সেন্টার ভাড়ার টাকা দিয়েছিলেন। লোক জোগাড় করা, প্রশিক্ষণ তদারকিসহ সবকিছুর মূল নির্দেশনায় ছিলেন।

ডিবি বলছে, কেবল কেবি কনভেনশন সেন্টারই নয়, কাটাবন মোড়ে মসজিদের পাশে একটি রেস্টুরেন্টের তৃতীয় তলায়, মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় ১০ নাম্বার রোডের একটি বাসার বেজমেন্টে, পূর্বাচলের সী শেল রিসোর্টে, উত্তরার প্রিয়াঙ্কা সোসাইটিতে মেজরের বাসায় একটি সুরক্ষিত অজ্ঞাত বাসায় এবং আরও অনেক বাসায় চলে প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা বৈঠক। এসব বৈঠকের প্রতিটিতে অংশ নেয় ৭০ থেকে ১০০ জন নির্বাচিত ক্যাডার।

মামলাটি এখন পুলিশের তদন্তাধীন। কিন্তু সাদিক আছেন সেনা হেফাজতে। পুলিশ চায় তাকে হেফাজতে নিতে। এরই মধ্যে সেনাপ্রধান বরাবর চিঠি দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু এখনো কোনো জবাব মেলেনি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু এখন প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত, তাই মেজর সাদিককে সামরিক হেফাজত থেকে মুক্ত করে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া উচিত। তবে এখানেই তৈরি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক প্রশ্ন। সামরিক বাহিনীতে কি এখনো শেখ হাসিনার অনুগতরা সক্রিয়? একটি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে সাদিক। এরকম আরও কত সাদিক সামরিক বাহিনীতে আছে তাই-বা কে জানে?’

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *