Google Alert – ইউনূস
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের জন্য বর্ধিত পণ্য রপ্তানি শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে নতুন এ হার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক এই বাণিজ্য চুক্তির প্রশংসা করে বলেছেন, এটি আমাদের কূটনৈতিক অঙ্গনে একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়। আমরাও মনে করি, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকতে পারব। বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ যাদের দীর্ঘ আলোচনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক এড়ানো সম্ভব হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই প্রশংসার দাবিদার।
উল্লেখ্য, আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের সঙ্গেই শুল্ক চুক্তি করেছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫, ভারতের ওপর ২৫, ব্রাজিলের ওপর ১০, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯, আলজেরিয়ার ওপর ৩০, মিয়ানমারের ওপর ৪০, ফিলিপাইনের ওপর ১৯, শ্রীলংকার ওপর ২০, ক্যামেরুনের ওপর ১৫ এবং ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিবর্তিত নতুন এ শুল্ক হারের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে একটি ‘সন্তোষজনক অবস্থা’ বিরাজ করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেখানে প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানি বাণিজ্যে আমরা তুলনামূলকভাবে একটা সন্তোষজনক অবস্থানে আছি, এ কথা বলাই যায়। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতো তৈরি পোশাকশিল্প। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য কিনে থাকে, তার ৮০ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। কাজেই সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক এড়ানোর কারণে আমাদের পোশাক খাত ও এ খাতের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকায় ছন্দপতন ঘটার আশঙ্কা কমল। বলা বাহুল্য, পোশাকশিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, এতে তারা অনেকটা সফল হয়েছেন। তবে মার্কিন শুল্কহার কমানোর আরও সুযোগ রয়েছে; এ লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
তবে এ সাফল্যের বিপরীতে বাংলাদেশকেও বেশকিছু বিষয়ে ছাড় দিতে হয়েছে। করতে হয়েছে আমেরিকান বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ ক্রয়সহ বেশকিছু চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ৭ লাখ টন গম আমদানি করা ছাড়াও দেশটি থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় শতভাগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেও আসতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এরূপ সিদ্ধান্ত কতটা ইতিবাচক হবে, সরকারকে সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে নতুন করে ২০ শতাংশ যুক্ত হওয়ায় মোট শুল্কহার দাঁড়াচ্ছে ৩৫ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই আগের চেয়ে উচ্চ হারে এ শুল্ক দেশের বাণিজ্য খাতকে ব্যয়বহুল ও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে। এমন অবস্থায়, ক্রমবর্ধনশীল প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের শুধু যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না, এ খাতটাকে আরও ডাইভারসিফাই করতে হবে।