যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, চীনকে হটিয়ে শীর্ষে ভিয়েতনাম

Google Alert – বাংলাদেশ

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৫.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এটি একক বৃহত্তম বাজার হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে রপ্তানি আয় ও পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে অর্জিত ৩.৩৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৫.১৩ শতাংশ বেশি। মঙ্গলবার ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের সহযোগী সংস্থা ওটেক্সা (OTEXA) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এ প্রবৃদ্ধির হার বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৭৬ শতাংশের চেয়ে বেশি, যার ফলে বাংলাদেশ তার প্রধান প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভিয়েতনাম চীনকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক হয়েছে। 

জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ সময়কালে বাংলাদেশ ১.৩৭ বিলিয়ন স্কয়ার মিটার পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে রপ্তানিকৃত ১.১১ বিলিয়ন স্কয়ার মিটারের তুলনায় ২৩.৮১ শতাংশ বেশি।

এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৮.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের ৩৫.৭৪ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।

এই প্রবৃদ্ধি মার্কিন বাজারে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্বিন্যাস ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য-শুল্ক সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভিয়েতনাম চীনকে হটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থান দখল করে। ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ভিয়েতনাম ৭.৭৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

চীন ৫.৭২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে এবং তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ১৬.১৪ শতাংশ। এটি পুনঃপ্রবর্তিত শুল্ক প্রতিবন্ধকতা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন।

দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় এবং সম্ভাবনাময় বাজার।

পারস্পরিক শুল্ক হার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ যেন অন্যান্য প্রধান উৎপাদনকারী দেশের চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক পায়, সেই দাবিও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক দিচ্ছে—যদিও ভিয়েতনাম ও ভারতের ক্ষেত্রেও তা যথাক্রমে ২০ ও ২৫ শতাংশ—তবুও বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান উন্নত হয়েছে।”

যদি শুল্ক হার আরও বেশি হতো, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারতো বলে মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, কিছু অর্ডার স্থগিত হলেও কিছু চালান আগেভাগে পাঠানো হয়েছিল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে মার্কিন অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, কারণ ওই সময়ের পর ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল।

চলতি বছরের ৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সমস্ত রপ্তানির উপর ৩৫ শতাংশ ফ্ল্যাট শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা পরে ১ আগস্ট ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

তবে একটি শর্ত ছিল—যদি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পণ্য শিপমেন্ট মার্কিন কন্টেইনার ডিপোতে পৌঁছাত, তাহলে আগের শুল্ক হারেই শুল্ক নির্ধারণ করা হতো। এ কারণে রপ্তানিকারকরা দ্রুত পণ্য পাঠাতে বাধ্য হন।

শোভন ইসলাম বলেন, চীন থেকে সরিয়ে নেওয়া অনেক অর্ডার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, যদিও ভিয়েতনাম বড় অংশীদারিত্ব দখল করেছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ চাইলে চীনের অর্ডার বেশি পরিমাণে ধরতে পারে, যদি সরকার নীতিগত সহায়তা দেয়—যেমন আর্থিক সহায়তা, দীর্ঘমেয়াদী নীতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, বন্দর দক্ষতা বৃদ্ধি।”

শিল্প খাত থেকে গবেষণা ও উদ্ভাবন, অটোমেশন, দক্ষতা উন্নয়ন ও মানবসৃষ্ট ফাইবার (MMF) ভিত্তিক পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগ করা হবে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনাম নতুন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে না, অন্যদিকে ভারত দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে এবং সম্প্রতি রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে বিশেষ ভর্তুকি ঘোষণা করেছে।

ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সময়ে ১৬.২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২.৮৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২.২৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মার্কিন বাজারে তাদের স্থিতিশীল বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে।

কম্বোডিয়া একই সময়ে ২৪.২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়ে ১.৯৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছে।

পাকিস্তানও ১১.২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়ে মার্কিন বাজার থেকে ১.১০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

munni_fe@yahoo.com

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *