Google Alert – সেনা
ঢাকার মিরপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা বাদে আসিফ শিকদার নামের সাবেক এক ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় তিন সেনা অফিসার, পাঁচ পুলিশ অফিসারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফরহাদ হোসেন নিয়ন জানান, গত ২৩ জুলাই আসিফ শিকদারের মা স্বপ্না বেগম ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। আজ (বুধবার) মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামিরা হলেন, মেজর মুদাব্বির, ক্যাপ্টেন তাম্মাম, সাইন্স ল্যাব সেনা ক্যাম্প ৩০ ফিল্ডের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সিরাজ, দারুস সালাম জোনের এডিসি জাকারিয়া, এসি এমদাদুল হক, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম, ওসি মতিউর রহমান (তদন্ত), আবুল কালাম আজাদ লেলিন, ফর্মা খলিল এবং সিএনজি ফরিদ।
মামলায় অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০ জুলাই স্বপ্না বেগম, ছেলে আসিফসহ পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে গেটে প্রচণ্ড ধাক্কার শব্দ শুনে আসিফ ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং অন্যদের ঘুম থেকে উঠান। স্বপ্না বেগম জিজ্ঞাসা করেন কে বা কারা ধাক্কা দিচ্ছেন। বাইরে থেকে জানানো হয়, শাহ আলী থানার ওসি। দরজা খোলার জন্য বলেন। প্রশাসনের লোকজনেন কথা শুনে স্বপ্না বেগম দরজা খোলা মাত্র তাকে ধাক্কা দিয়ে পুলিশ, আর্মি এবং সাদা পোশাকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন যৌথ বাহিনীর সদস্য জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং সমস্ত ঘরবাড়ি তছনছ করতে শুরু করে।
আসিফ তাদের বাসায় প্রবেশের কারণ জানতে চাইলে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সাদা পোশাক পরিহিতরা অন্যায়ভাবে তাকে চড়, থাপ্পড় মারতে থাকে এবং শরিফুল ইসলাম তাকে বেঁধে ফেলার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশের পর তারা আসিফের হাত পিছন দিকে হাত কড়া দিয়ে বেঁধে ফেলে। সামরিক বাহিনীর পোশাক পরিহিত যৌথ বাহিনীর ৩ থেকে ৪ জন আসিফের পা বেঁধে ফেলে এবং একই সঙ্গে তারা সবাই তাকে অমানবিক নির্যাতন করতে থাকে। পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলেও কোনও সুনির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ না করে দফায় দফায় আসিফকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে বাড়ির বাইরে থেকে শরিফুল ইসলামের নির্দেশে আসামিরা টানা হেঁচড়া করে নিহত আসিফকে বাড়ি থেকে বের করতে চেষ্টা করলে স্বপ্না বেগম শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চান আসিফকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। থানায় নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।
ফজর ওয়াক্তের কাছাকাছি সময়ে থানা থেকে স্বপ্না বেগমের কাছে সংবাদ আসে আসিফের কাপড় পায়খানা ও প্রসাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আসিফের জন্য নতুন কাপড় প্রয়োজন। এসংবাদ পাওয়ার পর পরিবারের লোকজন দ্রুত কাপড় নিয়ে থানায় যান। স্বপ্না বেগম আসিফের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে থানায় উপস্থিত আসামিরা জানান, আসিফকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে, গুলি করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা উদ্ভ্রান্তের মতো দিক বিদিক ছোটাছুটি ও সবার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে কিন্তু পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর ভয়ে কেউ সাহায্য করতে সাহস করেনি। এভাবে সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর সময় বেলা ১১টার দিকে স্বপ্না বেগম লোকমুখে সংবাদ পান, আসিফ শিকদার শাহ আলী থানায় পুলিশ হেফাজতে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনে মারা গেছে।