রহস্যেঘেরা বান্দরবানের ‘আলীর সুড়ঙ্গ’

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক ও রহস্যময় পর্যটন কেন্দ্র। আলীর সুড়ঙ্গ বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ‘আলীর পাহাড়’-এ অবস্থিত। এটি মাতামুহুরী-তৈন খাল ঘেঁষে দুটি পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এবং কয়েকটি সুড়ঙ্গের সমষ্টি, যার মধ্যে প্রধানত ৩টি বা ৪টি সুড়ঙ্গ রয়েছে।

গুহাগুলো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এবং ঝিরি থেকে প্রায় দেড়শো ফুট উপরে অবস্থিত। গুহার ভেতরের দিক ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং এখানে বেশকিছু প্রজাতির বাদুড় দেখতে পাওয়া যায়। কিছু গুহা ১০০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এবং কিছু গুহা পাহাড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ভেদ করে চলে গেছে। টর্চলাইট বা মশাল গুহার ভেতরে প্রবেশ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। গুহার প্রবেশ মুখে ওঠার জন্য একটি লোহার সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভেতরের কিছু অংশে পাথুরে পিচ্ছিল পথ যা দড়ি বা লতা ধরে উঠতে হয়। বর্ষাকালে ঝিরিপথে পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রবেশ কঠিনও বটে।

নামকরণের ইতিহাস : ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ নামকরণের কোনো সঠিক প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া না গেলেও এ নিয়ে বেশ কিছু জনশ্রুতি রয়েছে। একটি ধারণা হলো, আলীকদম নামটি ‘আলোক্যডং’ থেকে এসেছে, যার অর্থ পাহাড় ও নদীর মধ্যবর্তী স্থান। কিছু ঐতিহাসিক ধারণা করেন, নবম শতাব্দী থেকে আরাকানি শাসনে থাকা আলীকদম পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বাংলার সুলতান জালালউদ্দিনের করায়ত্ব হয়। পরে মুঘলরা ১৭৫৬ সালে এটি জয় করে।

ঐতিহাসিকদের মতে, আরাকানের ১৮ জন রাজা মুসলিম উপাধি গ্রহণ করেছিলেন, যার মধ্যে রাজা মাং খারির উপাধি ছিল ‘আলী খাঁন’ এবং রাজা থাজাথা-এর উপাধি ছিল ‘আলী শাহ্’। এই নামগুলোর প্রভাবে ‘আলীকদম’ বা ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ নামের উৎপত্তি হতে পারে।

আরেকটি জনপ্রিয় জনশ্রুতি হলো, হযরত শাহজালালের নেতৃত্বে ৩৬০ আউলিয়া যখন ধর্মপ্রচারের জন্য সিলেট আসেন, তখন তাদের একটি অংশ পার্বত্য এলাকায় আসেন। তাদের মধ্যে ‘আলী’ নামের কোনো আউলিয়ার পদধূলিতে এই অঞ্চলের নাম ‘আলীকদম’ বা ‘আলী গুহা’ হয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, যে পাথুরে পাহাড়ে এই গুহার অবস্থান, তার নামও ‘আলীর পাহাড়’। তাই আলীকদম, আলীর পাহাড় এবং আলীর গুহা একই সূত্রে গাঁথা বলেও ধারণা করা হয়।

পর্যটন তথ্য ও যাতায়াত : আলীর সুড়ঙ্গ একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট, বিভিন্ন মৌসুমে অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে আসেন। পর্যটকদের সুবিধার জন্য আলীর সুড়ঙ্গে যাতায়াত করতে দৃষ্টিনন্দন রাস্তা এবং ব্রিজও নির্মাণ করেছে সরকার।

যাওয়ার পথ : ঢাকা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের চকরিয়া বাস টার্মিনালে আসতে হবে। চকরিয়া থেকে বাসে বা ইজিবাইকে আলীকদম উপজেলা সদরে যাওয়া যায়। আলীকদম সদর থেকে টমটম বা ইজিবাইকে তৈন খালের ওপর দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ পার হয়ে ঝিরি ও পাহাড়ি পথে হেঁটে আলীর সুড়ঙ্গে পৌঁছাতে হয়। সম্প্রতি বান্দরবান হয়ে ডিম পাহাড়ের ওপর দিয়ে দেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা দিয়েও আলীকদম যাওয়া যায়, যা পানবাজার এলাকার কাছে মাতামুহুরী নদীর তীরে আলীর পাহাড়ে অবস্থিত।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মোমিন বলেন, যেসব পর্যটক পাহাড়ে এসে ইউনিক কিছু দেখতে চায় বা পাহাড়ি সুড়ঙ্গসহ প্রকৃতি পছন্দ করেন তাদের জন্য ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ ভ্রমণ খুবই আনন্দদায়ক হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে।

আলীর সুড়ঙ্গ ভ্রমণ রোমাঞ্চকর হতে পারে, তবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তাছাড়াও যারা আলীকদম আসবে তারা পোয়ামুহুরী সড়কের ভিউ পয়েন্টগুলো দেখে যেতে পারবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *