Google Alert – আর্মি

হুমায়ুন কবির জুশান উখিয়া (কক্সবাজার)

মিয়ানমারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে জান্তা বাহিনী। আরাকান আর্মির (এএ) সাথে চলমান সংঘর্ষ ইতোমধ্যেই রক্তক্ষয়ী আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে জাতিসঙ্ঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, রাখাইনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, যাদের মধ্যে দেড় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। ক্ষুধা ও হতাশায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে রাজ্যটিতে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধ, অবরোধ ও খাদ্য সঙ্কট মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামতে পারে বাংলাদেশে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনের আগে যতটা সম্ভব এলাকা পুনর্দখল করতে চায় তারা। তবে বাস্তবে আরাকান আর্মি রাজ্যের ১৭টির মধ্যে ১৪টি টাউনশিপ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। জান্তার দখলে আছে মাত্র রাজধানী সিত্তে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিয়াকফিউ এবং মানাউং। বিশেষ করে কিয়াকফিউতে চীনের সহায়তায় নির্মিত গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইন থাকায় এখানে বারবার সামরিক শক্তি পাঠানো হচ্ছে। অন্য দিকে সিত্তেতে সেনারা গোলাবর্ষণ ও অবরোধ চালালেও এখনো সরাসরি আক্রমণে যায়নি এএ। স্থানীয় সূত্র বলছে, শহরের আশপাশে টানেল খনন চলছে, যা সম্ভাব্য অবরোধের প্রস্তুতি। সংঘর্ষ রাখাইন ছাড়িয়ে মাগওয়ে, বাগো ও আয়েওয়াদ্দি অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় আরাকান আর্মি একাধিক সেনা ঘাঁটি দখল করেছে, পাল্টা অভিযানে জান্তা বিমান হামলা ও ভারী গোলা ব্যবহার করছে।

এদিকে সংঘর্ষের পাশাপাশি খাদ্য সঙ্কট রাজ্যটিকে আরো বিপর্যস্ত করেছে। ডব্লিউএফপি জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় রাখাইনের ৫৭ শতাংশ পরিবার এখন ন্যূনতম খাদ্য জোগাড় করতে পারছে না, যেখানে গত বছরের ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৩৩ শতাংশ। উত্তর রাখাইনের অবস্থাও আরো শোচনীয়। সংঘর্ষ ও অবরোধের কারণে সাহায্য কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে মানুষ বাঁশ গাছের কোন্দা সংগ্রহ করে খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে, অনেকে ঋণে জর্জরিত, কেউ কেউ ভিক্ষায় নেমেছে, শিশুরা স্কুল ছাড়ছে। মানব পাচারের মতো চরম পরিস্থিতিও দেখা দিচ্ছে কিছু এলাকায়। স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, ক্ষুধা ও হতাশায় অন্তত দু’জন আত্মহত্যা করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, সিত্তে শহর কার্যত অবরুদ্ধ, সেখানে মানুষ ক্ষুধায় কাতর।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ মিলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তায়। ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জান্তা আরো কঠোর অভিযান চালালে কিংবা খাদ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বাংলাদেশে। ২০১৭ সালে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর এমন ঢল আর দেখা যায়নি। এর আগে গত জুলাইয়ে জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছিল, গত ১৮ মাসে সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।

তবে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। নতুন করে যদি অনুপ্রবেশের ঢল নামে, তাহলে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠবে। রাখাইনের ভেতরে সহিংসতার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা, আর দুর্ভিক্ষের ছোবল তাদের বাংলাদেশে পালাতে আরো বাধ্য করতে পারে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *