Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম
রাঙামাটিতে চাঞ্চল্যকর কিনামোহন চাকমা হত্যা মামলায় ৩ আসামীর যাবজ্জীবন
নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে কেঁপে উঠেছিল পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম
আলমগীর মানিক |
০৫:০৯ পিএম, ২০২৫-০৮-০৬
আলমগীর মানিক
রাঙামাটিতে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৮ বছর পর জুরাছড়ির চাঞ্চল্যকর কিনা মোহন চাকমা হত্যা মামলায় এজাহারভূক্ত তিন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (৬ই আগষ্ট-২০২৫) ইং তারিখে রাঙামাটির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো: আহসান তারেক দন্ডবিধি ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারায় এই আদেশ দেন। আসামীদেরকে যাবজ্জীবন দন্ডাদেশের পাশাপাশি আরো ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬মাসের সাজার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, (১) সুবল চন্দ্র চাকমা ওরফে সুকৃতি/বুইজ্জা চাকমা(২) হৃদয় কুমার চাকমা ও (৩) বুদ্ধমনি চাকমা। এই মামলায় সাক্ষী প্রমানে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আরো ৮ আসামীকে খালাস প্রদান করেছেন আদালত।
গত ২০০৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর রাঙামাটির জুরাছড়িতে কিনা মোহন চাকমাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করে ও নির্যাতন করে হত্যা করেছিলো আসামীরা।
রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদিন রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে বলেন, রায় ঘোষনার সময় আসামীদের মধ্যে সি-ডাব্লিউ মূলে আসামী বুদ্ধমনি চাকমার উপস্থিতি থাকলেও দন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীদের মধ্যে সুবল ও হৃদয় কুমার চাকমা পলাতক ছিলো।
চাঞ্চল্যকর কিনামোহন চাকমা হত্যা মামলার রায় ঘোষনার সময় রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু উপস্থিত থাকলেও বাদি-বিবাদীপক্ষের আত্মীয়স্বজন কেউ উপস্থিতি দেখা নাগেলেও বিবাদীপক্ষের উকিল এ্যাডভোকেট উষাময় খীসা আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানাগেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, বিগত ২০০৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর তারিখে নিজের স্বজাতীয় সশস্ত্র জেএসএস সন্ত্রাসীরা জুরাছড়ি থেকে রাঙামাটি আসার সময় জনপ্রিয় পাহাড়ি নেতা কিনামোহন চাকমাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণ করার পর নির্জনস্থানে নিয়ে কিনা মোহন চাকমাকে গাছের সাথে বেধে গায়ের চামড়া তুলে ফেলা হয় এবং তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত ও দুই হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
তাকে এমন নির্মম ও নৃশংসভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। কথিত আছে গাছের সাথে তাকে পেরেকও মারা হয়। কিনা মোহন চাকমাকে এমনভাবে হত্যা করার পর পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ জেএসএস এর প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে এমনকি এই হত্যার পরে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম কেঁপে উঠে।
এই ঘটনার পরদিন কিনামোহনের ছেলে প্রিয় কুমার চাকমা বাদি হয়ে জুরাছড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পহেলা ডিসেম্বরে দায়ের করা এই হত্যা মামলায় উপরোল্লেখিত তিনজনকেসহ অজ্ঞাতদের আসামী করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই গোবিন্দ শুক্ল দাশ গত ০১/০৬/২০০৭ সালে সর্বমোট ১১জনকে আসামী করে আদালতে এই মামলার চার্জশীট দাখিল করেন।
পাহাড়ি-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় জুরাছড়ির কিনা মোহন চাকমাকে নির্মম ও নির্দয়ভাবে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ৫ মাস ৮দিন পর প্রায় ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন রাঙামাটির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো: আহসান তারিক।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রাঙামাটিতে বেশ কয়েকটি অস্ত্র, হত্যা ও মাদকের মামলার রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক মো: আহসান তারিক।
চলতি বছরের ৪ই জুন তারিখে রাঙামাটিতে যোগদানের পর মাত্র দুই মাস সময়ে চাঞ্চল্যকর ২০২১ ও ২৩ সালের অস্ত্র মামলায় ১৫ বছর ও ৭ বছর সাজা, মাদক মামলার ৫বছর রায়সহ সর্বশেষ কিনামোহন চাকমা হত্যা মামলার রায় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই বিচারক। এই ধরনের উদ্যোগে রাঙামাটিতে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অস্ত্র-বিস্ফোরক, অপহরণসহ হত্যা মামলার মতো মামলাগুলোসহ মামলার জট খুব দ্রুত সময়েই কমে আসবে বলেও ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট্যরা।