রাঙ্গামাটির সিম্বল ‘ঝুলন্ত সেতু’ এখনও পানির নিচে, নেই সংস্কারের উদ্যোগ

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের বুকে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘ঝুলন্ত সেতু’ যা জেলার পর্যটনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা ১৭ দিন ধরে পানির নিচে। এই অবস্থায় রাঙ্গামাটিতে ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা রাঙ্গামাটিকে পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে আশির দশকের শুরুতে পর্যটন করপোরেশন তবলছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের ওপর ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করেছিল। নির্মাণের চার দশক পার হলেও সেতুটির আকর্ষণ এতটুকু কমেনি। প্রতি বছর লাখো পর্যটক শুধু এই সেতুটি দেখতে রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসেন। কিন্তু এখন, বর্ষা এলেই সেতুটি হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায়।

রাজশাহী থেকে পরিবারসহ বেড়াতে আসা পর্যটক মো. মাসুদ রানা বলেন, টিভি-সংবাদপত্রে ঝুলন্ত সেতুর ছবি দেখে রাঙ্গামাটি ঘুরতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি সেতুটি পানির নিচে। খুব হতাশ হয়েছি।

তার স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। সেতুতে হাঁটার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেতুটি দেখা তো দূরের কথা, ছবি তোলাও সম্ভব হয়নি।

একই অভিযোগ করেন মো. রাহুল নামের আরেক পর্যটকও, স্মৃতির জন্য একটা ছবিও নিতে পারলাম না। শুধু নৌকায় ঘুরে সময় কাটালাম।

ঝুলন্ত সেতু ডুবে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া। প্রতিবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলিমাটি জমে হ্রদের গড় গভীরতা কমে যাচ্ছে। সময়মতো ড্রেজিং না করায় পানির স্তর বেড়ে গেলে সেতুটি পানির নিচে তলিয়ে যায়।

২০২৪ সালের মে মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯৭৭ কোটি টাকার একটি ড্রেজিং প্রকল্প (ডিপিপি) প্রস্তাব করলেও তৎকালীন সরকারের পতনের পর তা আর এগোয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনও অগ্রগতি নেই।

কাপ্তাই হ্রদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের অধীনে থাকলেও হ্রদের বিভিন্ন দায়িত্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভাজিত। যেমন: বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন: মৎস্য সম্পদ রক্ষা; কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র: পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন; পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো): পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন; রাঙ্গামাটি পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশন: পর্যটন অবকাঠামো। কিন্তু সেতুর উন্নয়ন বা আধুনিকায়নে কারও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।

রাঙ্গামাটি পর্যটন ঘাটের ম্যানেজার ফখরুল আলম বলেন, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যায়। যে কারণে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। আমাদের বোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার করা গেলে পর্যটক সারা বছর এখানে আসবে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে একটি ডিউ লেটার দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যদি আধুনিক নতুন ‘ঝুলন্ত সেতু’ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে তাহলে আমরা আধুনিক ‘ঝুলন্ত সেতু’ পাবো, পর্যটকরা নব উদ্যমে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলবে।

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ডুবে থাকায় আমারও খারাপ লাগে। সেতুটি সংস্কারে পার্বত্য উপদেষ্টাকে অবগত করা হবে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের বেঠকে আলোচনা করা হবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *