রাঙ্গামাটি কলেজে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউন্সিল: সভাপতি এলি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক উওয়াইনু মারমা

Hill Voice on Facebook

রাঙ্গামাটি কলেজে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউন্সিল: সভাপতি এলি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক উওয়াইনু মারমা

হিল ভয়েস, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম নারী সমাজ অধিকতর সামিল হইন’ শ্লোগানে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও ১৪তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা। এছাড়া এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক ইতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এর রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক মিলন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক উওয়াইনু মারমা। সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি কলেজ শাখা সাধারণ সম্পাদক এলি চাকমা এবং সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজর সভাপতি কবিতা চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুয়েল চাকমা বলেন, নারীরা যদি সমাজে সমঅধিকার, সমমর্যাদা লাভ করে তাহলে তারা এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদেরকে সমাজে দমিয়ে রাখা হয় রান্নাঘরে। আজকে বাংলাদেশের সমগ্র নারী সমাজের বাস্তবতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের বাস্তবতা আলাদা। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীরা বাংলাদেশে বিদ্যমান নারীর প্রতি বৈষম্যের শিকার, একইসাথে তারা বিজাতীয় শাসনযন্ত্রের দমন-পীড়নেরও শিকার। এই দুই ধরনের বৈরী বাস্তবতার সাথে মোকাবিলা করেই তাদের পথ চলতে হয়। এখান থেকে মুক্তির উপায় কী? তার সহজ উত্তর সংগ্রাম। রাজনীতির মাধ্যমেই রাষ্ট্রযন্ত্র নারীদের উপড় দমন-পীড়ন চালায়। তাই রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে তাদের মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। সকল ধরনের শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়ন থেকে প্রকৃত অর্থে মুক্তির তরে রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত হতে হবে। পাহাড়ের আপামর জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের মধ্যেই জুম্ম নারীদের অধিকার নিহিত রয়েছে। আমাদের জাতীয় মুক্তি অর্জন হলেই তবে আমাদের সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হবে। তাই জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে নারী সমাজকে এগিয়ে এসে আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে জুম্মদের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ নিহিত আছে। তাদের ভূমির অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার সর্বোপরি নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চুক্তিতে নিহিত। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। তাহলে অধিকতর আন্দোলন ব্যতীত আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের উপর একের পর এক আঘাত আসছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি আঘাতের জন্য পাল্টা জবাব দিতে হবে। তারজন্য নারী-পুরুষ সুসংগঠিত হয়ে সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইতি চাকমা বলেন, নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই এগিয়ে এসে এই সংগ্রামকে গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং রক্তের বিনিময়ে। তাই চুক্তিকে বা পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করা যাবে না। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের হাতে-হাত ধরে নবীন-প্রবীণ সবাইকে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথি সুমিত্র চাকমা বলেন, আমাদের নারী সমাজ বিজাতীয় শাসন-শোষণ ও ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে আসছে। নারীদের উপর এই দমন-পীড়ন বর্তমানে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী সমাজ পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী। তাদেরকে পেছনে পেলে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র কখনো এগিয়ে যেতে পারবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উলিসিং মারমা বলেন, আমরা কেউই রাজনীতির বাইরে নয়। জন্ম হতে মৃত্যু অবধি আমরা রাজনীতির দ্বারাই পরিচালিত হই। রাজনীতিই রাষ্ট্র চালায়। রাজনীতিই আমাদের অধিকার লুন্ঠন করে, আমাদের দমিয়ে রাখে, আমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দিতে চায়। এটা শাসকগোষ্ঠীর ঘৃণ্য রাজনীতি। আবার একমাত্র রাজনীতিই পারে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের নারীদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বারবার আত্ম-জিজ্ঞাসা করা দরকার। নারীরা সমাজের বাইরে নয়। মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল। আমরা জুম্ম জনগণ জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে অবতীর্ণ রয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের নারী সমাজের ভূমিকা আরো জোরালো হওয়া উচিত। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নকে পাশ কাটিয়ে এবং তার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে আলাদা করে নারী মুক্তি অসম্ভব। তাই জাতীয় মুক্তির আন্দোলন তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অধিকতর আন্দোলনে নারীদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতেই হবে। কারণ আমাদের সামনে একটিই পথ খোলা, তা হলো সংগ্রাম।

মিলন চাকমা তার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, নব্বই দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক সংগ্রাম পর্বে শাসকগোষ্ঠী জুম্ম জনগণের উপর অমানবিক জুলুম চালিয়েছিলো। জুম্ম নারীদের অবস্থা ছিল আরো নির্মম। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও বহিরাগত সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্ম নারীসহ আমরা সবাই চরম নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছি। মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি জুম্ম জনগণকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগ সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করে সরকারকে বাধ্য করেছে চুক্তিতে উপনীত হতে। এই মুহূর্তে জুম্ম জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে অধিকতর সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। এই সংগ্রামে পৃথকভাবে পুরুষরা বা পৃথকভাবে নারীরা কখনো সফল হতে পারবে না। নারী-পুরুষের যুগপৎ সংগ্রামই আমাদের জাতীয় মুক্তির পথকে প্রশস্ত করবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক উওয়াইনু মারমা তার বক্তব্যে বলেন, সমাজে নারীদের নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতরে রাখা হয়। এখনো আমাদের সমাজ প্রাচীন পশ্চাৎপদ চিন্তায় নিমগ্ন। নারীদের বিভিন্ন সীমারেখা টেনে দিয়ে দমিয়ে রাখা হয়। তার অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা হয়। ফলে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে। তারা সংগ্রাম বিমুখ হয়ে ওঠে। তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। নারী সমাজকে অবশ্যই জেগে উঠতে হবে। সমাজে বিদ্যমান সকল প্রকার ভ্রান্ত চিন্তাভাবনাকে পাশ কাটিয়ে প্রগতির আলো স্পর্শ করে আত্মমর্যাদা অর্জনের সংগ্রামকে গ্রহণ করতে হবে। নিজের আত্মরক্ষার জন্য নিজেকেই সোচ্চার হতে হবে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নারীমুক্তির সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

আলোচনা সভা শেষে এলি চাকমাকে সভাপতি, উওয়াইনু মারমাকে সাধারণ সম্পাদক, সূচনা চাকমা সাংগঠনিক সম্পাদক করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার ১৪তম কমিটি গঠন করা হয়।

সম্মেলন শেষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা।

কাউন্সিলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
https://hillvoice.net/en/bn/2024/12/%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9f%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9c%e0%a7%87-%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%b2-%e0%a6%89%e0%a6%87%e0%a6%ae/

(Feed generated with FetchRSS)

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *