রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা দূর করতে হবে

Google Alert – সেনাপ্রধান

রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা দূর করতে হবে

ছবি : সময়ের আলো।

সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক সতর্ক বার্তায় যেমন উঠে এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন নিজেদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে ভুলে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, অশ্লীল স্লোগান এবং একে অপরকে অপপ্রচার করার ঘটনাগুলো যেন আমাদের গণতান্ত্রিক আচরণ ও রাজনীতির সংস্কৃতির প্রতি প্রশ্ন তোলে। এই অপসংস্কৃতি পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হলেও, স্বাধীনতার ৫৪ বছরের বেশি সময় পরও আমরা এখনও মুক্ত হতে পারিনি। এটা শুধু রাজনীতির নয়, পুরো সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।

বর্তমান বাংলাদেশে রাজনৈতিক দৃশ্যপট যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক দলগুলো যখন তাদের ভিন্নমত প্রকাশের জায়গায় আক্রমণাত্মক ভাষা, অপপ্রচার এবং ব্যক্তিগত গালাগাল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তখন তা কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নয়, পুরো সমাজের সামাজিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মজবুতকরণ। কিন্তু যখন নেতারা কাদা ছোড়াছুড়ি, অশ্লীলতা ও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা অর্জন বা সংরক্ষণের চেষ্টা করেন, তখন দেশ পিছিয়ে যেতে বাধ্য।

এই তো এক বছর আগে জুলাই আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বৈরাচার হাসিনাকে বিদায় জানিয়েছে তাদের মধ্যেই এখন সেই ফাটল দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে। এক দলের নেতারা অন্য দলের নেতাকে উদ্দেশ করে কঠোর ভাষায় মন্দযুক্ত বাক্য ছুড়ছেন। দেশের রাজনীতির এই অবনতি শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দায় নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক সংকটের দিকেও নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম আজ এমন একটি পরিবেশে বড় হচ্ছে যেখানে রাজনৈতিক বিরোধিতা মানে অপমান আর ব্যক্তিগত আক্রমণ। এর ফলে তারা রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছে। যে সমাজ ও দেশের ভবিষ্যৎ এই তরুণদের ওপর নির্ভর করে, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণের আগ্রহ কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

কিছু দিন আগে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যে বার্তা দেয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাননি, দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলেছেন। বর্তমান কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে, দেশের সামগ্রিক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। এই দুর্বলতা এক পর্যায়ে সামরিক হস্তক্ষেপ, পতিত স্বৈরাচারের পুনর্বাসন বা অন্য কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য সুযোগ করে দিতে পারে-যা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য মারাত্মক বাধা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় বিন্দুমাত্র দ্বন্দ্ব লাঘব করতে নারাজ, তখন দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিভক্ত হয়ে যায়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, যা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জনজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি দেশে সামরিক বা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা বাড়ে, যা গণতান্ত্রিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বিপজ্জনক।

রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আনার জন্য জরুরি একটি সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। রাজনীতিবিদদের উচিত একটি স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করা, যেখানে বিরোধিতা থাকলেও তা হবে যুক্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক। মিডিয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকেও এই সংস্কারের অংশ হতে হবে, যাতে রাজনৈতিক আলোচনার মান উন্নয়ন হয় এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা রোধ হয়।

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতিও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। পারস্পরিক বিরোধিতা ও মতের তফাত থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অশালীনতায় না গড়ায়। রাজনৈতিক নেতাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে যে, তারা তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ও আশাবাদী করে তুলবে। কারণ একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে উঠতে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

সেনাপ্রধানের সতর্ক বার্তার তাৎপর্য এখানেই; তিনি শুধু বর্তমান সমস্যার কথা বলেননি, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্পষ্ট সংকেত দিয়েছেন। রাজনীতি যদি এমনই বিভাজনমূলক, দুষ্টচক্রপূর্ণ ও অশালীনতায় পূর্ণ থেকে যায়, তা হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র একসময় প্রকৃতির কাছেও সুরক্ষিত থাকবে না। দেশের ভবিষ্যৎ এই সংঘাত ও অশান্তি থেকে মুক্ত করতে হলে এখনই ঐক্যবদ্ধ ও সংযত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই সংকটের মূলে থাকা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশের বিকল্প পথ নেই। রাজনীতিবিদদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, মতবিরোধকে গ্রহণযোগ্য ও নির্মল আলোচনার মাধ্যমে মোকাবিলা করা এবং দেশপ্রেম ও জাতীয় একতার জন্য কাজ করা ছাড়া দেশ সঠিক পথে এগোবে না। এই ঐক্যই হবে ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ভিত্তি, আর তা না হলে আমরা সেনাপ্রধানের আশঙ্কিত অন্ধকার এক ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হব।

সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক সতর্ক বার্তায় যেমন উঠে এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন নিজেদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে ভুলে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, অশ্লীল সেøাগান এবং একে অপরকে অপপ্রচার করার ঘটনাগুলো যেন আমাদের গণতান্ত্রিক আচরণ ও রাজনীতির সংস্কৃতির প্রতি প্রশ্ন তোলে।

এই অপসংস্কৃতি পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হলেও, স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পরও আমরা এখনও মুক্ত হতে পারিনি। এটা শুধু রাজনীতির নয়, পুরো সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। তরুণ প্রজন্ম যাদের আশা ও স্বপ্ন, তারা এই বিষম পরিস্থিতিতে বড় হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনন ও অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারের ফলে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিষাক্ত হচ্ছে। যেকোনো দল দুর্বল করার চেষ্টা অবশ্যম্ভাবীভাবে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে, যা আগামী দিনে নানা ধরনের সংকট ডেকে আনতে পারে। বহুদলীয় ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে ছিল, কিন্তু বর্তমানে একাধিক ফাটলের কারণে সেটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দিতে হয়-বিরোধ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু সেটি হতে হবে যুক্তিপূর্ণ ও শালীন ভাষায়। অশ্লীলতা, কাদা ছোড়াছুড়ি ও ব্যক্তিগত আক্রমণ রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন। বিরোধিতা হওয়া উচিত চিন্তার উৎসাহ ও সমালোচনার মাধ্যমে, শত্রুতার মাধ্যমে নয়।

অবশ্যই, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত নেতিবাচক আচরণের পরিবর্তে ইতিবাচক নেতৃত্ব প্রদর্শন, যার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ও উন্নয়নমুখী রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন একত্রিত হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় কাজ করবে, তখনই দেশের রাজনীতি প্রকৃত অর্থে জনবান্ধব ও স্থিতিশীল হবে।

বর্তমানে রাজনীতির ময়দান যেন আরও বিষাক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, অপপ্রচার এবং বিভাজনমূলক রাজনীতি যদি অব্যাহত থাকে, তা হলে তা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্বল করবে না, পুরো দেশের গণতন্ত্রকে দুর্বল করার পথও খুলে দেবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি সামাজিক অস্থিরতা, আইনের শাসনের অবক্ষয় এবং অন্ততপক্ষে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সেনাপ্রধানের সতর্ক বার্তায় যে ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিফলন আগামী দিনে আমরা দেখতে পাব বলে সংশয় কম নয়। যখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত থাকবে, তখন দেশের সার্বভৌমত্ব ও শাসনব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে যাবে। এর ফলে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা কমে যাবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হবে এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, আমরা অনায়াসেই এমন এক যুগে প্রবেশ করব যেখানে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অশান্তি সাধারণ জীবনের অংশ হয়ে উঠবে। তখন সেনাপ্রধানের কথিত ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা’ কেবল কথা নয়, বাস্তবতায় পরিণত হবে। এ জন্য প্রয়োজন দ্রুত রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা, সংযম ও দায়িত্বশীলতার উদয়।

এককথায়, দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন অপরিহার্য। তা না হলে আমরা প্রতিনিয়ত এক ধরনের সংকট ও বিভাজনের দিকে এগিয়ে যাব, যা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বুদ্ধিমত্তা, দায়িত্ববোধ ও ঐক্যের ওপর। সময় এসেছে রাজনৈতিক ভেদাভেদের অতীতকে ভুলে গিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার। যদি তা না হয়, তা হলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র আরও গভীর সংকটে পতিত হবে।

এমএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *