Google Alert – সেনাবাহিনী
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ‘গোপন বৈঠক’ এবং এর সঙ্গে সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগের খবর দেশজুড়ে নানা আলোচনার তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ওই সেনা কর্মকর্তাকে আটকের পর তার বিষয়ে সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালত গঠনের খবর দিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।
‘গোপন বৈঠক’ বসেছিল কিভাবে-এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে নানা আলোচনা।
অবশ্য একটা বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে পুলিশের ভাষায়। পুলিশ বলছে, বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন হল ভাড়া নেয় এক ব্যক্তি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়।
শুক্রবার পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় অন্তত ২২ জনকে গ্রেফতারের কথাও জানা গেছে।
ভাটারা থানায় পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় উঠে আসে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের জড়িত থাকার বিষয়টি।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, “রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে।”
অভিযুক্ত মেজর পদের ওই সেনা কর্মকর্তাকে গত ১৭ই জুলাই তার বাসা থেকে হেফাজতে নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
এছাড়া ওই কর্মকর্তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে আরো একটি তদন্ত আদালত গঠন করার কথাও জানিয়েছে আইএসপিআর।
তারা বলছে, “তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে উক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ছবির উৎস, ISPR
বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে আয়োজন
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ‘গোপন বৈঠকের’ অভিযোগে গত ১৩ই জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানায় ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইনে” একটি মামলা করে পুলিশ।
মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, দিনব্যাপী বৈঠকটিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অংশ নেন।
গোপন ওই বৈঠকে সেনাবাহিনীর এক মেজর অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের “প্রশিক্ষণ দিয়েছেন” বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যেই ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বিবিসি বাংলাকে জানান, “সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি যে কেবি কনভেনশন হলে কোড ইউজ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ওইখানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠন একটা বৈঠক করছে দেশজুড়ে নাশকতা করার জন্য।”
ওইদিন এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী আইনের এই মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তদন্ত চলছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও। ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত আটই জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কেবি কনভেনশন হলে একটা বৈঠক নিয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল।
তিনি জানান, শামিমা নাসরিন শম্পা নামে একজন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ধরনের পেশায় বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে কনভেনশন সেন্টারটি ভাড়া করে।
পুলিশ বলছে, “এই ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কিনা, সেটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর প্রকৃত রহস্য কী এবং কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।”
এদিকে ‘রাজনৈতিক দলের বৈঠকে’ সেনা কর্মকর্তার অংশ নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসার পর গত ১৭ই জুলাই ওই কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয় সেনাবাহিনী।
এখন ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হলো।
আইএসপিআর বলছে, “সম্প্রতি একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক জনৈক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে উক্ত সেনা কর্মকর্তাকে তার নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়।”
এছাড়া, ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত আদালত এবং কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা সংক্রান্ত ব্যত্যয় এর বিষয়ে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করার কথাও জানিয়েছে আইএসপিআর।
এর আগে বৃহস্পতিবারও সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ওই মেজরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তারা অবগত আছেন।
“তার বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারবো,” বলেন কর্নেল ইসলাম।
ছবির উৎস, ISPR
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার বিচার প্রক্রিয়া হবে যেভাবে
রাজনৈতিক দলের বৈঠকে সেনা কর্মকর্তার অংশগ্রহনের অভিযোগ কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ওই কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার পর তার বিচার প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
আইএসপিআর বলছে, “প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পূর্ণ তদন্ত সমাপ্তি সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে উক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অর্থাৎ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ আদালতেই হবে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার তদন্ত ও বিচার। যা কোর্ট মার্শাল হিসেবেই পরিচিত সাধারণ মানুষের কাছে, বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ।
এই বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে মি. আহাম্মেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ম্যানুয়াল অব বাংলাদেশ আরমি ল (এমবিএএল) যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মিলিটারি ল (এমবিএমএল) বলেও পরিচিত, সেখানে এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে।
তিনি বলছেন, এই আইনের অধীনে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মতো কিছু বিষয় ছাড়া যেকোনো অপরাধের বিচার করার সুযোগ রয়েছে। অভিযুক্তের র্যাঙ্ক এবং অপরাধের ধরন বিবেচনায় পৃথক আদালত গঠন করা হয়।
তদন্ত আদালতে অপরাধ প্রমাণ হলে বিচারিক আদালতে সুপারিশ পাঠানো হয়। র্যাঙ্কের ভিত্তিতে কোর্ট গঠন করা হয়, যেখানে অভিযুক্তের পক্ষেও একজন কর্মকর্তা ডিফেন্ডিং অফিসার হিসেবে কথা বলার সুযোগ পায়। উভয়পক্ষের এই যুক্তিতর্কের রেকর্ড রাখা হয় বলেও জানান মি. আহাম্মেদ।
রায় দেওয়ার পর অভিযুক্তের কোনো আপত্তি থাকলে বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে, “একবার যখন সেনা আদালতে রায় হয়ে যায়, তখন এটা সিভিল আদালতে যেয়ে আবার সেটার বিরুদ্ধে ওই ভাবে লড়াই করা যায় না।”
“ক্ষেত্র বিশেষে এই কোর্ট মার্শাল কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে, যাবজ্জীবন দিতে পারে, তিন মাসের কারাদণ্ড দিতে পারে, শুধু চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে পারে। এটা তার অপরাধের ধরন ও মাত্রার ওপর নির্ভর করবে,” বলেন মি. আহাম্মেদ।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলছেন, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী যখন মাঠে থাকে, তখন একটি চাঁদাবাজিও অস্বাভাবিক বিষয়। সেখানে এই ধরনের অভিযোগ খুবই স্পর্শকাতর।
“এটি খুব সিরিয়াসলি ডিল করতে হবে,” বলেও মনে করেন তিনি।