Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম
✍️ মোঃ সাইফুল ইসলাম
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার ১নং রামগড় ইউনিয়নের অন্তু পাড়া এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র নিয়মিত ও লক্ষ্যভিত্তিক টহল অভিযান নিয়ে যেভাবে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ প্রচারমাধ্যম সিএইচটি নিউজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার চালিয়েছে—তা শুধু লজ্জাজনকই নয়, স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদকে আড়াল করার হীন অপচেষ্টা।
অন্তু পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজিবি’র ‘অবস্থান’ নিয়ে আজ সন্ধ্যায় ওই পোর্টালে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে যে, বিজিবি নাকি বিদ্যালয় দখল করে পাঠদান বন্ধ করে দিয়েছে, শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে—বিজিবি উক্ত বিদ্যালয়ের কোনো ভবন দখল করেনি, বরং সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণের আওতায় প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির মত প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বার্থে ঠিকাদারের অনুমতিতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের পাশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয় মাত্র, যেখানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আদৌ ওই ভবনে স্থানান্তরিত হয়নি। পাঠদান চলছে আগের মতই পুরনো বেড়ার ঘরেই।
এছাড়া, আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার গল্পটি আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে, নিরাপত্তাবাহিনীর আভিযানিক দলটি একটানা তিনদিন ধরে একই স্থানে অবস্থান করবে বলে যে অপতথ্যটি ছড়ানো হয়েছে সেটিও কাল্পনিক। তাহলে এই ‘পাঠদান ব্যাহত’ হওয়ার গল্পটা আসলে কার বানানো?
এই মিথ্যার পেছনে রয়েছে একটি স্পষ্ট এজেন্ডা—সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফের অস্তিত্ব রক্ষা। একটি সূত্র বলছে, অন্তু পাড়ার পাশেই দুর্গম একটি পাহাড়ে ইউপিডিএফের একটি গোপন আস্তানা রয়েছে, যেখান থেকে তারা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং সশস্ত্র সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। মাত্র এক মাস আগে, চাঁদা না পেয়ে ইউপিডিএফ অপহরণ করেছিল এক হতদরিদ্র আইসক্রিম বিক্রেতাকে, যাকে পরবর্তীতে বিজিবির তৎপরতায় মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তারা। এই বাস্তবতা ধামাচাপা দিতে এবং সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে অভিযান বন্ধ করাতেই এই নতুন নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে ‘বিদ্যালয় দখল’ নামক অপপ্রচারের মোড়কে।
এ বিষয়ে কথা হয় অন্তু পাড়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা রতন কুমার ত্রিপুরার সাথে। যার বসতবাড়ি ওই বিদ্যালয়ের ঠিক দেড়শ গজের মধ্যেই। “আমরা নিজেরাই দেখেছি বিজিবি কেউরেই ভয়ভীতি দেখায় নাই। ওনারা যখন টহলে আসে, তখন মনে একটু শান্তি লাগে। এই স্কুলে কোন পাঠদান বন্ধ হয় নাই, আর স্কুলতো আজকে বন্ধই ছিলো। যারা এসব মিথ্যা খবর ছড়ায়, তারা নিজেরা এলাকার শান্তি চায় না।”- বলছিলেন তিনি।
সব আতঙ্ক আর ভীতি পাশ কাটিয়ে অন্তু পাড়ার ওই বিদ্যালয়েরই এক ছাত্র জানালো, “ওই পাহাড়ের ভেতরে কিছু লোক এখনো চাঁদাবাজি করে। আমরা কেউ কিছু বললে পরে ভয় দেখায়। আগেও আমাদের পাড়ায় এক আইসক্রিম বিক্রেতারে ধরে নিছে। বিজিবি (তার ভাষায় বিডিআর) আসার পর ওদের সাহস কমে গেছে। এখন যারা বলে বিজিবি আসায় সমস্যা হয়, তারা আসলে ওই চাঁদাবাজদেরই পক্ষ নেয়।”
এরপরও আর যারা ভাবছেন বিজিবি শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—তাদের বলি, তোমরা কি ভুলে গেছ, পাহাড়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেছে ইউপিডিএফই? স্কুলের পোশাক পরিয়ে ‘সমাবেশে’ নিয়ে গিয়ে, জোর করে ‘মানববন্ধন’ করিয়ে, মগজ ধোলাই করে ইউপিডিএফই।
সিএইচটি নিউজ যে তথাকথিত সাংবাদিকতা করছে, তা আসলে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসকে বৈধতা দিতে ডিজিটাল রূপ দেওয়া ছদ্মবেশী রাষ্ট্রবিরোধী অপারেশন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাহাড়ের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পাহাড়ি সম্প্রদায়েরই জানমাল রক্ষায় কাজ করছে—তা প্রমাণিত সত্য। যারা সত্যি পাহাড়িদের পক্ষে কথা বলছে, তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান না তুলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা উচিত।
বিজিবির এই অভিযান কোনো নিছক টহল নয়—এটি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ নামক সন্ত্রাসী মাফিয়া চক্রকে জনগণের এলাকা থেকে উৎখাত করার একটি সাহসী উদ্যোগ। যারা এই অভিযানের বিরোধিতা করছে, তারা আসলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে।
এই পাহাড় আমাদের সবার—বাঙ্গালি হোক বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। কিন্তু পাহাড়ে কারা থাকবে, তা নির্ধারণ করবে জনগন, ইউপিডিএফের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে যারা ‘পাঠদান বন্ধ’ বা ‘আতঙ্ক’ বলে প্রলেপ দেয়, তারা আসলে সন্ত্রাসবাদের মুখপাত্র। তাদের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার সময় এখনই।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।