The Daily Ittefaq
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশার থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরজুড়ে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর হাতে চলছে চরম সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ। মানবিক সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, অবরুদ্ধ এই শহর থেকে খুব কম মানুষই পালাতে পেরেছেন।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশার দখলের পর থেকে আরএসএফ অন্তত ১৫০০ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে একটি হাসপাতালে সংঘটিত গণহত্যাও রয়েছে।
গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ শহর ছেড়েছে। অধিকাংশই ৭০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাওইলা শহরের আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যেই সাড়ে ছয় লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় নিয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত জানান, সাতজন আরএসএফ সদস্য তার বাড়িতে তল্লাশি চালায়, তাকে অপমান করে, এবং তার চোখের সামনে ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে হত্যা করে। তিনি আরও বলেন, পালানোর পথে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ দেখেছি। অনেক আহত মানুষকে ফেলে রাখা হয়েছে, কারণ তাদের বহন করার কেউ ছিল না।
আরেক জীবিত বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হুসেন জানান, গোলাগুলিতে আহত অবস্থায়ও তিনি একটি পরিবারের সহায়তায় গাধার গাড়িতে করে তাওইলায় পৌঁছেছেন।
তার ভাষায়, এল-ফাশারে রাস্তায় লাশ পড়ে আছে, কবর দেওয়ারও কেউ নেই। আমরা ভাগ্যবান যে অন্তত এখানে পৌঁছাতে পেরেছি, যদিও কিছুই সঙ্গে আনতে পারিনি।
বাসিন্দা আয়েশা ইসমাইল বলেন, প্রতিদিনই গোলাগুলি ও ড্রোন হামলা হতো। আমরা যদি ঘরে না লুকাতাম, তাহলে তারা আমাদের রাইফেলের বাট দিয়ে মারত। রাত তিনটায় আমরা পালিয়ে হিল্লাত আলশেথে পৌঁছাই, যেখানে আমাদের লুট করা হয়। জুতা পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
খার্তুম থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিবা মরগান জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ১৫ হাজার মানুষ তাওইলায় পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই দিনরাত না খেয়ে, চিকিৎসা ছাড়াই হেঁটে এসেছে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের কর্মকর্তা ম্যাথিল্ড ভু বলেন, তাওইলায় পৌঁছানো মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এটাই ভয়াবহ বাস্তবতা।
জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার সতর্ক করে বলেছেন, এল-ফাশারের পরিস্থিতি এখন মানবিক বিপর্যয়ের অন্ধকারতম স্তরে পৌঁছেছে।
তিনি আরও জানান, শহরে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও পুরুষদের অপহরণ বা হত্যা অব্যাহত রয়েছে, এবং আরএসএফ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় বাধা দিচ্ছে।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল বরাদ্দ করেছে দারফুরে ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করতে।
সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, সৌদি হাসপাতাল এলাকায় ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে—যাদের মধ্যে ছিলেন রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থীরা।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ শায়না লুইস বলেন, আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সতর্ক করছিলাম- উত্তর দারফুরে গণহত্যার ঝুঁকি রয়েছে। এখন সেই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা ঘটছে।
সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারের পর থেকে এল-ফাশার কার্যত আরএসএফের অবরোধে রয়েছে, এবং শহরে থাকা লাখো মানুষ খাদ্য ও ওষুধ ছাড়াই আটকে পড়েছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব জানিয়েছে, স্যাটেলাইট ছবিতে মানবদেহের মতো বস্তুর গুচ্ছ এবং রক্তের দাগ দেখা গেছে—যা চলমান গণহত্যার প্রমাণ বহন করছে।
সূত্র/আল-জাজিরা

